এস এম আকাশ: ময়মনসিংহের ত্রিশালে এক যুবলীগ নেতার অত্যাচারে মাছ রক্ষায় পুকুর পাড়ে বসবাস করেও বিপদ কাটছে না অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মফিজ উদ্দিনের। সরকার পরিবর্তনের পরেও ওই নেতার দাপট না কমায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। বিগত কয়েক বছরে দুটি পুকুরের কয়েক লক্ষ টাকার মাছ রাতের আধারে মেরে নেওয়ায় ক্ষতি মফিজ উদ্দিন বিচারপ্রার্থী হয়েছেন।
ত্রিশাল উপজেলার উত্তর কানিহারী গ্রামের বাসিন্দা পুলিশ সদস্য মো.মফিজ উদ্দিন ২০১৭ সালে অবসরে যান। এরপর ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ একর ২৫ শতাংশ জায়গায় বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ শুরু করেন। এক বছর যেতে না যেতেই তার মামাতো ভাই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন নানা ভাবে পুকুরের ক্ষতি শুরু করেন। প্রায় সময় রাতের আধারে পুকুরের মাছ চুরির পাশাপাশি পাড়ের গাছ—গাছালী কেটে নেন। এ থেকে রেহায় পেতে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পাশাপাশি আয়েশী জীবন ছেড়ে পুকুর পাড়ে থাকা—খাওয়া শুরু করেন। এতকিছুর পরেও জয়নাল আবেদীন প্রভাব খাটিয়ে প্রতিনিয়ত মাছ চুরি করায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন মফিজ উদ্দিন। এসব বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি তিনি। সম্প্রতি সরকার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে তার দোসররা স্থান পরিবর্তন করলেও জয়নাল এলাকায় থেকে প্রভাব খাটাচ্ছেন।
সম্প্রতি ত্রিশালের কানিহারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, জয়নাল আবেদীনের উৎপাত খেকে মাছ রক্ষায় দুটি পুকুরের পাড়ে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা, পুকুর জুড়ে খুঁটি বসানো, পুকুরের পাড়ে রান্না ঘরের পাশাপাশি থাকার জন্য ঘর নিমার্ণ করেছেন। স্বামী—স্ত্রী মিলিয়েই সেখানে বসবাস করছেন।
ভুক্তভোগি মফিজ উদ্দিন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, অবসরের সমস্ত টাকা দুটি পুকুরে বিনিয়োগ করেও আজ পর্যন্ত লাভের মুখ দেখতি পারিনি। বিগত সময়ে জয়নাল যুবলীগের পদের প্রভাব দেখিয়ে পুকুরের মাছ চুরি করার পাশাপাশি বিদ্যুতের মিটার খুলে নেয়া, লাইন কেটে দেয়াসহ নানা ভাবে ক্ষতি করে আসছে। সরকার পরিবর্তন হলেও তার প্রভাব শেষ হয়নি। জয়নাল আমার জীবনটা শেষ করে ফেলেছে, এলাকার বখাটে মাদকাসক্তদের নিয়ে প্রতিনিয়ত আমার ক্ষতি করে যাচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আমার জোরদাবি ঘটনা তদন্ত করে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।
মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী জীবন নাহার বলেন, জয়নালের ক্ষতির হাত থেকে মাছ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে আমরা পুকুর পাড়েই বসবাস করছি। তারপরেও সে অপতৎপরতা বন্ধ করেনি। খুব কষ্টে আমরা অমানবিক জীবন—যাপন করছি।
শ্রমিক জুয়েল মিয়া বলেন, তাদের অত্যাচারে পুকুরের কাজে বেশি দিন কেউ থাকছে না। পুকুরের খুঁটি তুলে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে মাছ চুরি প্রতিনিয়ত হওয়ায় মফিজ উদ্দিন অনেকটাই সমস্যায় পড়েছেন। এর একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
অভিযুক্ত ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি সাধারণ ভাবে জীবন—যাপন করি। মফিজ উদ্দিন সম্পর্কে আমার ভাই হয়। তার সাথে কোন বিরোধ নেই। তাই তার পুকুরের মাছ চুরি তো দূরের কথা ধারে কাছেও যায়নি। অযথা আমাকে হয়রানি করার জন্য এসব বলা হচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো.জিন্নাত উল্লাহ বলেন, অভিযোগকারী অভিযুক্ত এবং আমি একই গোষ্ঠীর লোক। মফিজ উদ্দিন পুলিশে চাকরী করার কারণে একটু অন্যরকম মানষিকতা। তাই তার সাথে কারো তেমন মিলে না। জয়নালের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোপুরি সত্য নয়।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার্ (ওসি) মো.কামাল হোসেন বলেন, এর আগের অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। ভুক্তভোগি এবার আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তাকে সকল ধরণের আইনী সহযোগিতা করা হবে।
আরও খবর...