কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ দলীয় কোনো পদ-পদবি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হয়ে কপাল খুলেছে তার।
গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সম্পদে ফুলেফেঁপে উঠেছেন তিনি।
এমপি হওয়ার আগে তার সম্পদের পরিমাণ ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা থাকলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। পাশাপাশি বেড়েছে স্ত্রীর সম্পদও।
একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জর্জের নির্বাচনী হলফনামার সম্পদ বিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ দ্বিতীয় বারের মতো ২০১৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে দলীয় ভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি নির্বাচিত হন। পরে তাকে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়।
একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা যায়, পাঁচ বছর আগে জর্জের আয় ছিল তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩৬ টাকায়। আয় বাড়ার পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ। ৫ বছর আগে তার স্থাবর ১০ লাখ ও অস্থাবর ২৬ লাখ ৫০ টাকার সম্পদ ছিল। বর্তমানে তার স্থাবর সম্পদ আছে ১০ লাখ টাকার ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ সময় তার স্ত্রীর সম্পদ ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ টাকায়।
বর্তমানে এক কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা সম্পদের মালিক এ দম্পতি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় সেলিম আলতাফ জর্জের স্থাবর-অস্থাবর ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পদের মধ্যে নগদ ১০ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ১৫ লাখ টাকা, আসবাবপত্র এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২ দশমিক ৪৫ একর কৃষি জমি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যৌথ মালিকানার ৪ কক্ষ বাড়ির ২ কক্ষ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় এক কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ১২ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৩৭ লাখ টাকা, ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি প্যারাডো ভিএক্সআর-১ গাড়ি, ২০ লাখ টাকা মূল্যের ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার, এক লাখ ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিকস সামগ্রী (এসি, ল্যাপটপ ইত্যাদি) ও এক লাখ ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র দেখিয়েছেন জর্জ এমপি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ২ দশমিক ৪৫ একর কৃষি জমি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যৌথ মালিকানার ৪ কক্ষ বাড়ির ২ কক্ষ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও দশমিক ৪৩ একর কৃষি জমি দেখানো হয়েছে।
৫ বছর আগে স্বর্ণালংকার ও গাড়ি না থাকলেও বর্তমানে জর্জের এক কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ও গাড়ি রয়েছে। ৫ বছর আগে জর্জের বার্ষিক আয় ছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা। তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩৬ টাকায়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার স্ত্রীর ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পদের মধ্যে ছিল বিয়ের সময় উপহার হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ টাকা মূল্যের ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার এবং এক লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকস পণ্য। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় জর্জের স্ত্রীর ২৭ লাখ টাকার সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ এক লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ২০ লাখ টাকা, ছয় লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী (ফ্রিজ, টিভি অন্যান্য) এবং একটি টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়ি দেখানো হয়েছে। গাড়িটির মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। গাড়িটি তার শ্বশুর উপহার হিসেবে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৫ বছর আগে তার ২০ লাখ টাকা মূল্যের ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল, এবার তার কোনো স্বর্ণালংকার নেই।
সেলিম আলতাফ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার দৌহিত্র তিনি। তার চাচা আবুল হোসেন ও চাচি সুলতানা তরুণও এমপি ছিলেন। আরেক চাচা সামছুজ্জামান অরুণ কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র ছিলেন।
তার বাবা প্রয়াত আলতাফ হোসেন কিরণ মুক্তিযোদ্ধা ও স্কুলশিক্ষক ছিলেন। মা মমতাজ বেগম অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা মমতাজ বেগম অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষীকা ছিলেন। বর্তমানে তিনি কুমারখালী মহিলা পরিষদের সভানেত্রী।
অবশেষে এই আওয়ামী লীগ নেতা গত মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর লালমাটিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিএমপির ডিবিপ্রধান রেজাউল করিম মল্লিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জের নামে কুষ্টিয়া ও ঢাকায় একাধিক হত্যা মামলা আছে। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তুলে রিমান্ড চাইবে পুলিশ।
আরও খবর...