হারুনুর রশিদ নরসিংদী প্রতিনিধিঃ নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার পলাশতলি ইউনিয়নের গোবিন্দপরে জমি লিজ নিয়ে বিশ্বের জনপ্রিয় সবজি চাষে এগিয়ে এসেছেন মাজহারুল ইসলাম। রায়পুরায় নতুন প্রজেক্ট শুরু করেছেন। স্বপ্ন দেখছেন কৃষিকে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে নতুনত্ব এনে অর্থনৈতিক লাভবান হওয়া। মাজহারুল ইসলাম জেলার বেলাব উপজেলার দেওয়ানের চর গ্রামের শহীদুল্লাহ্ আফ্রাদের ছেলে। কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও শাহ জালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ইতিপূর্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সহিত চাকরি করেন। কৃষক পরিবারের সন্তান হিসাবে চাকরি অবস্থায় ভাবতেন নিজেকে কি করে কৃষিতে নিয়জিত করে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুনত্ব নিয়ে আসার যায় । নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। দেশে ও বিদেশের চাহিদা পূরণ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া। মাজহারুল ইসলাম বলেন, উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি জীবন শুরু করি। তখনই মনে করি কি ভাবে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ ও বিদেশের চাহিদা পূরণ করে নিশ্চয়ই অর্থনৈতিক লাভবান হওয়া সম্ভব । উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে। আমার সব সময় ইচ্ছে ছিলো কৃষি নিয়ে কিছু একটা করা। কি করে কৃষিতে সাফলাইন চেইন সিস্টেম তৈরি করা যায়। প্রথমে ইউটিউব চ্যানেল দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন প্রজেক্ট প্রশিক্ষণ ও পরিদর্শন করি। সেটাকে পুঁজি করে নতুন প্রজেক্ট শুরু করি। এরি মাঝে ক্যাপসিকাম, স্কোয়াশসহ অন্য সবজি চাষ শুরু করেছি।ক্যাপসিকাম বিভিন্ন দেশে খাবারে সহায়ক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানিং এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে। বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে চাষ করে থাকে, যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া মিষ্টি মরিচের বিদেশে রপ্তানীর সম্ভাবনাও প্রচুর। কারণ সারা বিশ্বে টম্যাটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ।পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ’সি’ থাকার কারণে এবং অতি সহজেই টবে চাষ করা যায় বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। বিদেশে ক্যাপসিকাম মরিচ চাষ করা হয়। এর আরেক নাম বেল পিপার।যা বিভিন্ন বর্ণে পাওয়া যায় এই মিষ্টি মরিচ। বর্তমানে আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই ক্যাপসিকাম। তাই দেশীয় অন্যান্য সবজির পাশাপাশি ক্যাপসিকাম চাষও বাড়ছে এ দেশেও। পুষ্টিগুণের বিচারে ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচের জুড়ি নেই।
প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে রয়েছে- ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন ৪.৬০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ১.৭০ মিলিগ্রাম স্নেহ, ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ৩৭০ আইইউ ভিটামিন এ।এছাড়াও রয়েছে সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬, থায়ামিন ও ফলিক এসিড। ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার ইত্যাদি। যা দেহের বাড়তি ক্যালরি পূরণে সহায়তা করে। ফলে উচ্চ চর্বি থেকে স্থূলতা হওয়ার সুযোগ হ্রাস করে। এতে রয়েছে ক্যাপসাইসিনস। যা ডিএনএর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের সাথে সংযুক্ত হতে বাধা দেয়। তাই এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। অ্যালকালয়েড সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ক্যাপসিয়াম চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি ভালো। মিষ্টি মরিচ খরা ও গোড়ায় পানি জমা কোনটিই সহ্য করতে পারে না। মিষ্টি মরিচের বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রতি শতকের জন্য ১ গ্রাম বীজ দরকার হয়। বীজ থেকে প্রথমে চরা তৈরি করে নিতে হয়। মিষ্টি মরিচে কিছু পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে আছে জাবপোকা. থ্রিপস পোকা, লালমাকড়, এ্যানথ্রাকনোজ রোগ, ব্লাইট রোগ ইত্যাদি। ক্যাপসিকাম খরা ও জলাবদ্ধতা কোনটাই সহ্য করতে পারে না, তাই প্রয়োজন অনুসারে জমিতে সেচ দিতে হবে। কোন গাছে ফল ধরা শুরু হলে খুঁটি দিতে হবে যাতে গাছ ফলের বারে হেলে না পড়ে। এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে ক্যাপসিকান বেগুনি, অরেঞ্জ, রেড, গ্রীন কালার চাষ শুরু করি। যা ৬০- ৭০ দিনের ফলন আসে। বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে ফুল আসা শুরু করেছে। ভালো ফলন ফলনোর জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি । যদি আশানুরূপ ফলন এ সফলতার মুখ দেখতে পায় তবে সামনের বছর বড় পরিসরে এক্সপান করার ইচ্ছে পুষন করছি। চাষে পলিমালসিন ব্যবহার করেছি। যদি দেখি ভালো ফলন আসে তবে নেট খরচটা কমে যাবে। অন্ত্র অল্প জায়গায় নেট হাউস করেছি কীটনাশক ব্যবহার না করে ভালো ফলন ফলাতে পারি। এক বিগাতে ২৫ হাজার টাকার নেট ব্যাবহারে খরচ হয়েছে। দুইটাতে তুলনা করে দেখব কোনটাতে খরচ কম হয়। পরবর্তীতে আবহাওয়া ও খরচ কম হয় সে অনুযায়ী চাষে এগিয়ে যাবো। চারা উৎপাদনের খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। ভালো বীজ সংগ্রহ করে কিভাবে শোধন করে নিতে হয়। মাটি ব্যতীত প্লাস্টিক ট্রে তে কপিপেস্ট ও ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে চারা উৎপাদন করি। আরও কিছু সবজির বীজতলায় বীজ রোপন করা আছে, তরমুজ ২ প্রজাতি, সাম্মাম তিন রকম, বেগুনি টমেটো, চাইনিজ শসা এবং দেশী শশা, হাইব্রিড কাঁচামরিচ,চাইনিজ ক্যাবেজ লম্বা বেগুন, লতিরাজ কচু চাষ করেছি সাত বিঘা এবং ব্রকলি ১৪ শতক জমিতে চাষ করেছি। স্কোয়াশ 8 শতক জমিতে চাষ করেছি। খরচ ৩২০০ টাকা, এখন পর্যন্ত বিক্রি করছি ৮০০০ টাকা। আশা করি আরো কিছু বিক্রি করতে পারবো।এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশাকরি আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবং বাজারদর ভালো পেলে, ৮ – ১০ লক্ষ টাকার বিক্রি করতে হবো ইনশাল্লাহ।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বনি আমিন খান বলেন,সে আমার সাথে দেখা করেছে। পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করছি। কৃষিতে শিক্ষীতরা এগিয়ে আসলে প্রযুক্তির ব্যবহারে দেশ হয়ে উঠবে সমৃদ্ধশালী। তৈরি হবে নতুন নতুন উদ্যোক্তা।