মো.সেলিম রানা,কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্থানীয় কয়েকজন মাটি খেকুদের বিরুদ্ধে অন্যের সরিষা ক্ষেত নষ্ট করে রাঁতের আধাঁরে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তারা ওই রাস্তা দিয়ে কখনো জোরপূবক ও কখনো টাকার বিনিময়ে দুই ফসলি জমির মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। অভারলোড মাটি ভর্তি ড্রামট্রাক চলাচল করায় ভেঙ্গে যাচ্ছে রাস্তা-ঘাটও।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাঁতে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।এলাকাবাসী, স্থানীয় কৃষক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাভারের আশুলিয়া থানার ছনটেকি এলাকার হাজী মোঃ আলী হোসেন গত ২০-২৫ বছর আগে কালিয়াকৈর উপজেলার দরবাড়িয়া ও দক্ষিণ পাকুল্লা এলাকায় প্রায় ৩০ বিঘা দুই ফসলি জমি কিনেন। এরপর থেকে তিনি সেখানে নিয়মিত দুই ফসল উৎপাদন করে আসছেন। কিন্তু গত ৫ দিন আগে উপজেলার বামনাবহ এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে সোহেল রানা ও পাশের চৌধুরীর টেকী (কাই ার টেক) এলাকার হেলাল উদ্দিনের ছেলে আতিকুর রহমান তাদের সহযোগী নিয়ে রাঁতের আধাঁরে বেকু দিয়ে সরিষার ক্ষেত নষ্ট করে প্রায় ১০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ করে। এতে পায় ১০ শতাংশ জমির সরিষা নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও অনধিকার প্রবেশ করে রাঁতের আধাঁরে তার ১-২ শতাংশ ফসলি জমির মাটিও লুট করে নিয়েছে ওই মাটি খেকুরা। খবর পেয়ে জমির কেয়ারটেকার সেলিম হোসেন স্থানীয় লোকজন নিয়ে সেখানে যান। এসময় সরিষা ক্ষেত নষ্ট করে রাস্তা ও জমির মাটি লুট করার কারণ জানতে চাইলে ওই মাটি খেকুরা ওই জমির কেয়ারটেকার সেলিম হোসেনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এমন কি তারা ওই কেয়ারটেকারকে খুন-জখমের হুমকিও দেন।
এ ঘটনায় ওই জমির কেয়ারটেকার সেলিম হোসেন বাদী হয়ে শুক্রবার রাঁতে মাটি খেকু সোহেল ও আতিকুরের নাম উল্লেখ করে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়াও স্থানীয় সফিক রাঁতের আধাঁরে পাশের বিশাল সরিষাময়াল নষ্ট করে রাস্তা নির্মাণের পর প্রায় ১৫-২০ ফুট গর্ত করে দুই ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মাটি খেকুরা। শুধু মাটি খেকু সোহেল, আতিকুর, সফিক নয়, আশপাশে আরো কয়েক দল মাটি খেকু রয়েছে। এভাবে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মাটি খেকুরা অন্যের জমি দিয়ে রাস্তা বানিয়ে কখনো জোরপূবক ও কখনো টাকার বিনিময়ে দুই ফসলি জমির মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে যেমন উর্বরতা হারাচ্ছে দুই ফসলি জমি, অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ কৃষক।
এছাড়াও নিয়মবর্হিভুত অভারলোড মাটি ভর্তি ড্রামট্রাক যাতায়াত করায় ভেঙ্গে যাচ্ছে স্থানীয় মাটির রাস্তা, ইটসলিং রাস্তা ও কার্পেটিং সড়ক। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব সড়ক দিয়ে চলাচলরত মানুষ। তাদের অভিযোগ এসব মাটি খেকুরা মোটা অংকের টাকা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই দুই ফসলি জমির মাটি লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব মাটি খেকুদের রোধ করা না গেলে দুই ফসলি জমি আর থাকবে না বলেও জানান স্থানীয় লোকজন।
অভিযোগকারী কেয়ারটেকার সেলিম হোসেন, মুক্তার হোসেন, লেহাজ উদ্দিনসহ আরো অনেক জানান, মাটি খেকুরা বেকু দিয়ে রাঁতের আধাঁরে সরিষার ক্ষেত নষ্ট করে ভাঙ্গাচুরা ইট রাস্তা বানিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। পরে তারা এসব রাস্তা দিয়ে জোরপুর্বক মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
এসব বিষয় জানতে চাইলে উল্টো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ খুন-জখমের হুমকি দিচ্ছে। সরিষার ক্ষেত নষ্টের বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত মাটি ব্যবসায়ী সোহেল রানা জানান, আমি ও আতিকুর ছাড়াও আশপাশে ১১টি মাটি কাটার দল আছে। তারা সবাই এভাবেই মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করছে।কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, অন্যের সরিষা ক্ষেত নষ্ট করে রাস্তা বানিয়ে মাটি কাটার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী হাফিজুল আমিন জানান, এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে খোঁজ নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।