নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গল্পের গণি মিয়া গরীব কৃষক ছিলেন। পরের জমি বর্গা চাষ করে কষ্টে সংসার চালাতেন তিনি। তবু সেই জমি চাষ করার জন্য তার অন্তত হালের বলদ ছিল। কিন্তু ময়মনসিংহের ভালুকার কৃষক আবু বকর সিদ্দিকের সেই হালের বলদও নেই।
এক সময়ে থাকা অনেক বেশি আবাদী জমি কমে গেছে এখন অল্প কিছু জমিতেই ফসল আবাদ করে সংসার চলে। সেই জমির ফসলই তার ভরসা। তবে সেই জমি চাষের জন্য বলদ না থাকায় বলদের বদলে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে মই টেনে প্রস্তুত করেন ফসলের মাঠ। অপরিকল্পিতি শিল্পায়নে গড়ে উঠা ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বর্জ্যে আবার রয়েছে সেই ক্ষেতের ফসল নষ্টের শঙ্কা।
ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের ছোট কাশর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেয়া যায়, যে কাজটি বলদ কিংবা ট্রাক্টর দিয়ে করানোর কথা সেই কাজটি করছেন কৃষক আবু বকর সিদ্দিকের স্ত্রী মমতাজ বেগম এবং শিশু ছেলে মাহাদী হাসান সুমন। তাদের দিয়ে ক্ষেত রোপনের প্রস্তুতির জন্য মই দেওয়া হচ্ছে। এ কাজে সহযোগিতা করছেন আবু বকর সিদ্দিক।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ৩৫ শতাংশ জমি ট্রাক্টর দিয়ে হালের কাজ করিয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে কয়েকদিন ধরে ক্ষেতে মই দিতে পারছিলেন না। অনেক জায়গায় টাকা ধার চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে নিরুপায় হয়ে স্ত্রী সন্তানকে দিয়ে মইয়ের রশি টানাচ্ছেন এবং নিজে মইয়ের পেছনে ধরে সহযোগিতা করছেন।
বুকভরা আশা নিয়ে ধান রোপন করলেও ফসল তোলা নিয়ে সংশয় রয়েছে তার। ওয়ান শিসাং ইন্ডাষ্ট্রির বিষাক্ত পানির জন্য গেল পাঁচ বছর ধরে ফসল ঘরে তুলতে পারছেন তিনি। তবেও ক্ষেত পতিত না রেখে আশা নিয়ে এবারও রোপনের জন্য প্রস্তুত করছেন।
আবু বকর সিদ্দিকের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, ৬ সদস্যের সংসারে উপার্জনের লোক নেই। তাই কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য স্বামীকে সহযোগিতা করছেন। এটিকে তিনি গর্ববোধ মনে করছেন। কারো কাছে টাকা ধার চেয়ে না পাওয়া ও পেলেও সময় মতো পরিশোধ করতে না পারলে অনেক কথা শুনতে হয়। তাই কারো কাছে মাথা নত না করে নিজের কাজ নিজে করাই উত্তম বলে মনে করেন মমতাজ।
স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন বলেন, ওয়ান শিসাং ইন্ডাষ্ট্রির বিষাক্ত পানি লাউতি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। যখন মিলের বিষাক্ত পানি খালে ছাড়া হয় তখন সরু খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে না পেরে কৃষকের জমিতে উঠে যায়। যার ফলে এলাকার শতশত একর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। কৃষক আবু বকরের মতো অনেকেই কষ্ট করে ফসল রোপন করে কিন্তু লাভ হয়নি। বিষাক্ত পানি পরিকল্পিত ভাবে ছাড়ার জন্য এলাকার লোকজন বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। ফসল নষ্টের পাশাপাশি রোগবালাইও বেড়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে জামিরদিয়া গ্রামে চীনাদের প্রতিষ্ঠিত ওয়ান শিসাং ইন্ডাষ্ট্রিতে গেলেও ফ্যাক্টরীর ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এখানে দু’ভাষী হিসেবে কর্মরত আব্দুল মাজেদ খোকন বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক না থাকায় গণমাধ্যমের সামনে কেউ কথা বলতে পারবে না। তবে তাদের বিষাক্ত বর্জ্যে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
কৃষি কর্মকর্তা নারগিস আক্তার বলেন, অভাবের তাড়নায় স্ত্রী সন্তানকে দিয়ে হাল চাষ করানো দুঃখজনক দাবি করে তাদের সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন।
এ বছর ভালুকা উপজেলায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। তবে ফ্যাক্টরীর ময়লার কারণে অনেকের ফসলেই নষ্ট হচ্ছে। উৎপাদিত ফসল খেয়ে অনেকের রোগবালাইও হচ্ছে। পরিকল্পিত ভাবে ফ্যাক্টরীর কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করেন নারগিস আক্তার।