দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা গ্রামের সমতল ভূমিতে চা বাগান করে চমক দেখিয়েছেন র্যাবেন গ্রুপের ডাইরেক্টর এম আতিকুর রহমান।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় দুইটি ইউনিয়নে প্রায় ১২ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। সুগন্ধী ধান-লিচুর জন্য এ উপজেলার নাম ডাক থাকলেও এখন চা পাতার ফলন বেশ ভালো হচ্ছে। চা বাগান গুলোতে স্থানিয় শতাধিক নারী পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বিশেষ করে নারি শ্রমিকরা বেশি কাজ করছে ।চা বাগান না হওয়ার আগে নাররীরা বাসায় বেকার বসে থাকত এখন চা বাগানে কাজ করে সংসারে সচ্ছোলতা এসেছে পরিবার গুলোতে।
বাগানের ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সাথে কথা বলে জানান, গত সাড়ে ২ বছর পূর্বে পঞ্চগড় থেকে চা গাছের চারা এনে নিজস্ব জমিতে পরীক্ষামূলক রোপন করেন।
বর্তমানে তিনি ৪৫ থেকে ৫০ দিন পর-পর চা পাতা বিক্রি করছেন। একটি চা কোম্পানি তার বাগানে এসে চা পাতা নিয়ে যায়। বাগান থেকে প্রতি কেজি চা পাতা ১৬ থেকে ২৭ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। মরিয়ম চা বাগানে এলাকার কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। গত ১২ মার্চ রবিবার তিনি প্রায় ১ হাজার কেজি মতো চা পাতা বিক্রি করেন। সামনে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কেজি চা পাতা বিক্রি হবে বলে তিনি ধারণা করছেন।
চিরিরবন্দর উপজেলার মরিয়ম টি বাগানে চা শ্রমিক দিলাপ কুমার বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এ বাগানে চায়ের পাতা তুলি। আগে বাসায় কাজ না থাকলে দুরে যেতাম কাজের জন্য এখন বাসার কাছে চা বাগান হওয়ায় কিছুটা শান্তিতে আছি। তবে চা বাগানে কাজ করে মুজুরি টা একটু কম হয়ে যায়। বাগান মালিক যদি আমাদের মুজুরিটা বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। কারন বাজারে সব জিনিসের দাম অনেক চড়া।
চা শ্রমিক অনিকা রায় বলেন, চা বাগানটি বাসার কাছে হওয়ায় খুব ভালো হয়েছে আগে বাসায় বসে থাকতাম কোন কাজ করতাম না। এখন বাসার কাছে চা বাগান হওয়ায় এখানে কাজ করে সংসারে কাজে লাগাতে পারছি। বাচ্চাদের লেখা পড়ার খরচ দিতে পারছি। তবে নারী শ্রমিকদের মুজুরি টা কম হয়েছে। আমরা চাই আমাদের দিন মুজুরি টা আরেকটু বাড়িয়ে দেয়া হোক।
চা শ্রমিক লতা রানি বলেন, আগে কৃষি জমিতে কাজ করতাম বাসা থেকে আমার স্বামী কাজ যেতে নিষেধ করত। এখন আমার স্বামী সহ দুজনে মরিয়ম টি বাগানে কাজ করি। কৃষি কাজ তো সবসয় থাকে না আগে কাজ না থাকলে বাসায় বসে থাকতে হত। এখন বাড়ির সাথে চা বাগান হওয়ায় দুজনে মিলে চা বাগানে কাজ করে আমাদের সংসারে অভাব দুর হয়েছে।
চিরিরবন্দর উপজেলার মরিয়ম চা বাগানের মালিক এম আতিকুর রহমান বলেন, কৃষির জেলা দিনাজপুর হলেও এখানকার কৃষকরা অবহেলিত। আমি চিন্তা করেছি এখানকার কৃষকরা যাতে অবহেলিত না থাকে বা কৃষি শ্রমিকরাও যাতে বেকার না থাকে সে চিন্তা থেকে জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় সাতলালা ইউনিয়নের ২০২০ সালে চায়ের বাগান শুরু করি প্রথমে প্রায় ৫ একর জমিতে শুরু করি এক বছরের মাথায় চা পাতা তুলা শুরু করি দেখলাম অন্য জেলার তুলনায় আমার বাগানে পাতার ফলন ভালো, তখন বাগান বাড়িয়েছি। এখন প্রায় ১০ একর জমির উপর মরিয়ম চা বাগান।
তিনি বলেন, চিরিরবন্দরে আমরা প্রথম পরীক্ষামূলক চা বাগান লাগাই। আমরা মোটামুটি সফল। আমাদের এদিকে যে চা গাছ ভালই হয় সেটা আমরাই প্রমাণ করলাম। অনেক জনে বলেছিল এদিকে চা বাগান হবেনা। কিন্তু চেষ্টা এবং পরিশ্রম করেছি। আল্লাহর রহমতে চা বাগান ভালই হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখানে চা বাগান করে স্থানীয় শতাধিক নারী পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে আমরা এখানে চায়ের ফ্যাক্টরি বানাবো খুব দ্রুত এবং মরিময় টি বাগানের চা বাহিরের দেশে রপ্তানি করব।
চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা বলেন, চিরিরবন্দরের কৃষিতে নতুন মাত্র যোগ হয়েছে চা চাষ। আমাদের উপজেলার সাতনালা ও ফতেজংপুর দুটি ইউনিয়নে প্রায় ১২ একর জমিতে চায়ের চাষ হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে চা চাষিদের। এবছর প্রথম আজ থেকে পাতা তোলার কাজ শুরু হয়েছে পাতার ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
জাফর ইকবাল চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি