রাজধানীর কদমতলী পূর্ব দোলাইর পাড় এলাকার খন্দকার এনামুল হক ওরফে কে, এইচ এনামুল হক নামক এক ভূমিখেকোর প্রতারণা হার মানিয়েছে সিনেমার কাহিনীকেও। রাজনৈতিকভাবে জামায়াত সংশ্লিষ্ট এই প্রতারক যুদ্ধাপরাধী মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা আঃ কাদের মোল্লা’র বেয়াই। এলাকায় দলিল জালিয়াতি, ভূমি দখল, টাকা আত্মসাত, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী। পূর্ব দোলাইর পাড় সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাবেক সভাপতি (কমিটি বর্তমানে বিলুপ্ত) শুধু ভূমিখেকো নয়, অর্থ আত্মসাত মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিও। ভ‚মিখেকো কে, এইচ এনামুল হকের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে পূর্ব দোলাইর পাড় সমাজ কল্যাণ সংস্থার অন্য সদস্যরা পদত্যাগ করে কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়। এই ভ‚মিখেকোর বিরুদ্ধে বর্তমানে একাধিক মামলা চলমান এবং বিভিন্ন মামলায় জামিনে রয়েছেন বলে তথ্যপ্রমাণ সূত্রে জানা গেছে।
প্রতারক ভূমিদস্যু খন্দকার এনামুল হক সম্পর্কে সরজমিনে এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে পাওয়া যায় আরও চমকপ্রদ তথ্য। জানা যায়, ঢাকার পূর্ব দোলাইর পাড় এলাকার মৃত খন্দকার নাছির উদ্দিনের ছেলে। এনামুল হক বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ, জমির দলিল জালিয়াতি, অবৈধভাবে জোরপূর্বক অন্যের জমি ও দোকানপাট দখল করে ৯ তলা ভবন নির্মাণ করে বর্তমানে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মেজবাউদ্দিন বাবুল নামক এক ব্যক্তির নিকট থেকে দোকান ভাড়া নেওয়ার কথা বলে দোকান ভাড়া নিয়ে পরবর্তীতে ঐ দোকান ও বাড়ির মালিকানা দাবি করে নিজ নামে দলিল তৈরি করে। এ বিষয়ে বাবুলের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে শ্যামপুর থানায় ৪৬০/৪৬৮/৪৭১/৪০৬/৪২০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং-২৩। উক্ত মামলায় তিন বছর সাজা হয়, তবে তিন মাস কারাভোগ করে বর্তমানে জামিনে রয়েছে প্রতারক এনামুল।
এছাড়া এলাকাবাসী আতিকুর রহমান, মাকসুদুর রহমান শুভ, আঃ মান্নান এর নিকট থেকে জানা যায় যে, হাজী মোঃ লাট মিয়া নামক এক ব্যক্তিকে জমির আমমোক্তারনামা দলিলের টেম্পারিং কপি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাত করে এনামুল। এ বিষয়ে লাট মিয়া আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং-৫২০/২২। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি (ঢাকা পূর্ব) তে এসআই তারিকুল হকের নিকট তদন্তনাধীন রয়েছে, যার কপি পত্রিকা অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে।
এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে আত্মসাতের দায়ে এনামুলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়। এ মামলায় এক বছরের কর্মকান্ড দেওয়া হয় এবং এক মাস সশ্রম কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে এসে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে এ প্রতারক।
এছাড়া চাঁদাবাজি ও বাড়ীঘর ভাংচুরের দায়ে আব্দুল মান্নান নামক এক ব্যক্তি কদমতলী থানায় এনামুলের বিরুদ্ধে আরও একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যার নং-৫২৩। প্রতারকের প্রতারণার খপ্পর থেকে বাদ যায়নি তার পরিবারের সদস্যরাও। প্রতারক এনাম তার আপন ছোটভাই রাশেদুল হকের জমি প্রতারণা করে নিজ নামে দলিল করে নেয়। শুধু তাই নয়, থানা পুলিশের সহযোগিতায় মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন ছোট ভাই রাশেদকে। এ ঘটনায় এনামুলের বিরুদ্ধে ছোট ভাই রাশেদের স্ত্রী ফারহানা রাশেদ কদমতলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যার নং-১৬৮।
ছোট বোন ফাহমিদা রহমান পুতুল। টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ছোট বোন পুতুল এনামুলের বিরুদ্ধে একই থানায় আরও দুইটি অভিযোগ দায়ের করেন, যার নং ১৩১৩ ও ১৪১০। উপযুক্ত বিচার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন পুতুল এবং আদালতে দু’টি মামলা দায়ের করেন, যার নং- সি আর ২১৩/১৩ ও সি আর ৪৯৬/১৩। খন্দকার এনামুল হক ওরফে কে এইচ এনামুল হক শুধুমাত্র প্রতারণা করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি একজন চরিত্রহীনও বটে। আপন ভাই খন্দকার এহসানের স্ত্রীকে প্রথমে কুপ্রস্তাব দেয় ও প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পথিমধ্যে আক্রমণ করে রক্তাক্ত জখম করে এই এনামুল। এ ঘটনায় কদমতলী থানায় মামলা দায়ের করা হয়, যার নং-৩(১)১৮।
সম্প্রতি প্রতারক এনামুল হকের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি গণস্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছে। তবুও থেমে নেই তার প্রতারণা। তাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।