সেবা ডেস্ক ::: পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সন্তান প্রসবের আগে গিয়েছিলেন ফারজানা (২৬)। সেখানে আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে এসেছিল যমজ সন্তানের মা হচ্ছেন তিনি। খুশিই ছিলেন এতদিন। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে যখন তিনি এক এক করে ৫টি সন্তান প্রসব করলেন। তবে সঠিক চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকায় জন্মের আধা ঘণ্টার মধ্যে সব শিশুর মৃত্যু হয়। ফারজানার বাড়ি নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠির সোহাগদল গ্রামে।
ফারজানার স্বজনদের অভিযোগ, রিপোর্ট যথাযথ এলে তারা আরও ভালো জায়গায় ফারজানাকে ভর্তি করতে পারতেন আর হয়তো বেঁচে যেত তার সন্তানরা। অভিজ্ঞতা না থাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকরা শিশুদের বাঁচাতে পারলেন না। উপরন্তু মায়ের শরীরেরও অবনতি ঘটতে শুরু করে। উপায় না পেয়ে মাকে সেখানকার চিকিৎসকরা নেসারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।
ফারজানার ভাই সবুজ বলেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট যদি যথাযথভাবে আসত, তাহলে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা বরিশালে যেতে পারতাম। কিন্তু রিপোর্ট যথাযথ না আসায় আমার বোনের উন্নত চিকিৎসা করতে পারিনি। ফলে পাঁচটি বাচ্চাই মারা গেছে। আমার বোনের মতো এ রকম ক্ষতি আর যেন কারো না হয়।’
শুধু নেছারাবাদেই নয়, জেলা সদর থেকে শুরু করে প্রতিটি উপজেলার অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের মান একই রকম। অদক্ষ কর্মচারী আর দায়িত্বহীন ব্যক্তিদের দিয়ে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। ফলে অর্থ খরচ করলেও প্রতারিত হচ্ছেন চিকিৎসাপ্রত্যাশীরা।
অন্যদিকে হাড়ভাঙা চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা আর ক্লিনিকে ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে ম্যানেজার দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্র। মেডি প্রাইম ক্লিনিকের ম্যানেজার সুকদেব মণ্ডল বলেন, ‘আমি ব্যবস্থাপত্র দিই না। তবে মাঝে মাঝে চিকিৎসক না থাকলে ফোনে ডাক্তার যে ওষুধ আমাকে লিখতে বলেন, আমি সেগুলো লিখে দিই।’
তবে তদারকি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি ডাক্তার মো. ফিরোজ কিবরিয়া জানান, সব ঠিক আছে। কারো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে জেলায় রিপোর্ট করবেন তারা।
জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার বাসিন্দা জুবায়ের জনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের বোঝার কোনো উপায় নেই শহরে অ্যাপোলো, স্কয়ার, ল্যাব এইড নামিদামি হাসপাতালগুলোর নামে ছোট্ট করে নিউ ল্যাব এইড, নিউ অ্যাপোলো, নিউ স্কয়ার হাসপাতাল ব্যবহার করে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। কারণ, অনেকেই বোঝে পিরোজপুরের এই ক্লিনিক বা ডায়াগস্টিক সেন্টারগুলো ঢাকার নামিদামি ওইসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বা হাসপাতালের শাখা।’
পিরোজপুর সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে মাঝে মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করি এবং আইনগত ব্যবস্থা নিই। কিন্তু বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে আবার এসব কাজে লিপ্ত হয়। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে।’
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় ১৪৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ৪৮টি ক্লিনিক রয়েছে। আর যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় ২০২২ সালে বন্ধ করা হয়েছে ৯টি প্রতিষ্ঠান।