মো. মিলন সরকার, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়া শেরপুর উপজেলার ঘোলাগাড়ী কলোনির আরেক নাম ‘বেনারসি পল্লী’। ১৯৯০ সালের পর থেকে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও কালের আবর্তনে এখন জীবন বাঁচাতে কোনোরকম পেশাটাকে ধরে রেখেছেন এখানকার কারিগররা (তাঁতি)।
তবে ঈদ এলেই ‘খটাশ-খটাশ’ শব্দে মুখর হয়ে ওঠে বেনারসি পল্লী। সে সঙ্গে ঘূর্ণমান মেশিনে সূতো গোছানোর পাশাপাশি ড্রাম মেশিনের সাহায্যে সুতা প্রসেসিংসহ শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকে শ্রমিক। বেনারসি পল্লী নামে খ্যাত ঘোলাগাড়ী কলোনিতে গিয়ে দেখা মেলে শাড়ি তৈরিতে কারিগরদের কর্মব্যস্ততা।
মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বেনারসি পল্লীতে এতোসব আয়োজন। সময়ের সঙ্গে ঘনিয়ে আসছে ঈদুল ফিতর। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেনারসি তৈরিতে দিনরাত অতিবাহিত করছেন কারিগররা।
জেলা শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা শহর। সেখান থেকে ৪-৫ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে দেখা মিলবে এই ঘোলাগাড়ী কলোনির। বাহিরের মানুষের কাছে ঘোলাগাড়ী কলোনি ‘বেনারসি পল্লী’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত। এখানে ৫০ টি তাতে চলত শাড়ি তৈরির কাজ কিন্তু কালের বিবতনে হারিয়ে যেতে বসেছে তাঁত শিল্প, তাই বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০টি তাঁত।
ঘোলাগাড়ী কলোনি ‘বেনারসি পল্লীতে’ ১৯৯০ সালের পর থেকে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটতে থাকে। ধীরে ধীরে নারীরাও এ পেশায় নিজেদের যুক্ত করতে থাকেন। সাংসারিক কাজের ফাঁকে-ফাঁকে এ কাজ করেন তারা। বেনারসি পল্লীতে বেনারসি, বুটিক, জামদানি, টাইটাকি, কাতান, কাতান বুটিক, পাটি নামের বাহারি ডিজাইনের শাড়ি তৈরি হয়। এসব বাহারি শাড়িতে ফুটে ওঠে প্রতিটি বাঙালি ললনার প্রকৃত রূপ-মাধুরি।
বেনারশি পল্লির কারিগরা ছোট থেকেই তারা এ পেশার সঙ্গে জড়িত। শেরপুর উপজেলার ঘোলাগাড়ী কলোনিতে তারাসহ হাতে গোনা কয়েকজন প্রথম শাড়ি বুননের কাজ শুরু করেন। প্রথমদিকে একটি শাড়ি তৈরিতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লেগে যেতো। তখন বিদ্যুৎ ছিল না। গ্রামীণ অবকাঠামো ভালো ছিল না। এখন কলোনির বিদ্যুৎ রয়েছে। রাস্ত-ঘাট আগের তুলনায় বেশ ভালো। বর্তমানে দুই-তিন দিনেই তৈরি করা যাচ্ছে উন্নতমানের একেকটি বেনারসি শাড়ি। আর এর শাড়ি তৈরির কাচামাল সুতা, জরি, কেলা, তানি, রংসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিয়ে আসেন ঢাকার মিরপুর থেকে।
তাদের তৈরি শাড়িগুলো ঢাকার মিরপুর-১০, ১১, ১২ এর ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। মিরপুরের ব্যবসায়ীরা ঘোলাগাড়ী কলোনিতে তৈরি করা বেনারসি শাড়ির প্রধান ক্রেতা। এছাড়া উত্তরবঙ্গের বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় এসব শাড়ি বিক্রি করা হয়ে থাকে। তবে তা সংখ্যায় অনেক কম। সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে ব্যবসায় তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেন কারিগরা।
বর্তমান বাজারে বেনারসি পাইকারি ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকায়, বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্থান, তাইওয়ান, চায়না, ভারত ও দেশীয় সুতার ব্যবহার হয়ে থাকে এ শাড়িগুলোতে। এ এলাকার বেনারসি শাড়িগুলো ঢাকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় বানিজ্যিক ভাবে সরবরাহ করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে মালিক ও কারিগররা সরকারের সু-দৃষ্টি প্রয়োজন। সম্পূর্ণ মেশিনে তৈরি ভারতীয় শাড়ী আমদানির জন্য ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে তাদের। তবে হাতে তৈরি এসব পোশাকের কদর অন্যরকম। সরকারি অনুদান পেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশাবাদি তারা।
n/v