আমতলী( বরগুনা) প্রতিনিধিঃ আজ “১৪ই ডিসেম্বর১৯৭১” এর এই দিনে বরগুনার আমতলী হানাদার মুক্ত হয়। ১১ই ডিসেম্বর বরগুনার বুকাবুনিয়া ক্যাম্প থেকে প্রায়ত হাবিলদার হাতেম আলী, আফাজ বিশ্বাস ও মোয়াজ্জেম হোসেন এর নেতৃত্বে পচাকোরালিয়া থেকে আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারে আসে ১২ই-ডিসেম্বর আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও পাশা তালুকদার এর নেতৃত্বে একদল মুক্তিবাহিনী কুকুয়া শহীদ সোহরাওয়ার্দী মাধ্যমিক বিদ্যালয় এসে পৌঁছায়। এরপর সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন আহমেদ এর নেতৃত্বে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয় এবং গলাচিপা থেকে মুজিব বাহিনীর হারুন-অর-রশিদ ও আবদুর রব মিয়ার নেতৃত্বে এক দল মুক্তি বাহিনী এসে ঐ ক্যাম্পে যুক্ত হয়। দুই গুরুপে যুক্ত হয়ে আমতলী থানা মুক্ত করার পরিকল্পনা করে।
ঐ সময় ততকালীন আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম আসমত আলী আকন ও দলিল উদ্দিন মাষ্টার আমতলী থানা মুক্ত করত থানার সাথে সমঝোতার উদ্যোগ ন্যায় ঐ সময় থানায় কোন পাক বাহিনী ছিল না, থানায় ওসি রইস উদ্দিন ভূঁইয়া সহ কয়েক জন পুলিশ সদস্য ও রাজাকার বাহিনী ওসি শান্তি পূর্ন ভাবে আমতলী থানা মুক্তি বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিতে রাজি হন এবং ওসি একটি চিঠি পাঠান যা ছিল ওসি র সাজানো ফাঁদ ।
মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা একে পাইলট হাই স্কুলের পশ্চিম পাশে অবস্থান নেন । মুক্তি বাহিনী থানায় আসলে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়, এই পরিকল্পনার কথা মুক্তি বাহিনীরা জেনে যায়। রাত ৮ টার দিকে মুক্তি বাহিনী ও মুজিব বাহিনী জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে এক রাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়ে। জবাবে ওসি ও রাজকার বাহিনী মুক্তি বাহিনীর উপর বর্ষার মতো গুলি বর্ষন শুরু করে, রাতভর চলে গুলি বিনিময় এতেকরে নৌকার মাঝি শহিদ হন একজন। (তার নাম জানা যায় নি) কাক ডাকা ভোরে গলাচিপা গ্যারিলা বাহিনী হারুন অর রশিদ মতান্তরে ফেরদৌস হায়দার নদী পার হয়ে থানার সীমানা ঘেঁষে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এতে ওসি রইস উদ্দিন ভূঁইয়া সহ রাজাকার বাহিনী ভয় পেয়ে যায় এবং চতুর্দিকে থেকে মুক্তি কামি জনতা মিছিল নিয়ে থানার দিকে আসতে থাকে মুক্তি বাহিনী নদী শাতরিয়ে থানার দিকে আসতে থাকে এই খবর পেয়ে অবস্থার বেগতিক দেখে ওসি রইস উদ্দিন ভূঁইয়া ও রাজাকার বাহিনী পতাকা উত্তোলন করে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান।
১৪ই ডিসেম্বর ০৮ টার দিকে মুক্তি বাহিনী ও মুজিব বাহিনী যৌথ ভাবে জাগ্রত জনতা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে থানার প্রধান ফটকে প্রবেশ করে এই সময় ওসি রইস উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার বাহিনী অস্ত্র জাগিয়ে আত্মসমর্পণ করে । পরে আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদার ওসি রইস উদ্দিন ভূঁইয়া ও তার সহযোগীদের আটক করে। মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত জনতা জাতীয় সংঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমতলী কে মুক্ত ঘোষণা করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণ করতে আমতলী উপজেলা পরিষদ চত্বরে ২০১২-১৩ সালে নির্মান হয়েছে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ। কৃষ্ণ বর্নের এ স্মৃতি স্তম্ভটির নির্মাণ কাজ ২০১৪ সালে সম্পন্ন হয়।