মোঃ ইবাদৎ হোসেন অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধিঃ মানুষ বেঁচে থাকার প্রয়োজনে কতো ভাবে যে জীবিকা নির্বাহ করে তার ইয়াত্তা নেই। গাছের পোকা মাকড় বিক্রী করে অনেকের সংসারে লেগেছে স্বাবলম্বীর হাওয়া ৷
যশোরের অভয়নগরে বিভিন্ন স্থানে হিড়িক পড়েছে শিরিষ গাছে (রোড শিরিস) সংক্রমিত ছত্রাক সংগ্রহে। শুধু তাই না, এটা কিছু মানুষের এখন উপার্জনের মাধ্যম হয়েছে। উপজেলার আশপাশের এলাকার নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোররা প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে উঠেই বেরিয়ে পড়ছে শিশু গাছের কথিত ভাইরাস পোকার সন্ধানে। রীতিমতো মহড়া শুরু হয়ছে এলাকায়। স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের কাছে থেকে প্রতি কেজি পোকা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে প্রকারভেদে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এরপর পিকআপ ভরে চলে যাচ্ছে এর পাইকারী মোকামে।
উপজেলার শ্রীধরপুুরের পোকা সংগ্রহকারী নাজির বলেন, আমার ছেলে গাছে ডাল কাটছে, আমি নিচে, আমার বাড়িতে আট জন কৃষাণ আছে আঠা ছাড়ানোর জন্য। তিনি বলেন, দিনে আমি সর্বোচ্চ ৬৯ কেজি পর্যন্ত আঠা সংগ্রহ করেছি, দিনে চার হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করেছি। এলাকায় কয়েক হাজার টাকার গাছ কেনা রয়েছে তার। তিনি বলেন এগুলো বেনাপোল সীমান্তের লোকেরা আমার কাছ থেকে কিনে নিয়ে যায়, এছাড়াও নওয়াপাড়া শহর থেকে আসা নাজমুল,রবিউলসহ অনেকেই দলবদ্ধভাবে রাস্তার পাশের শিরিশ গাছ থেকে ডাল ভেঙে পোকা সংগ্রহ করতে দেখা যায়। তারা একে ভাইরাস বলে এলকাবসীকে বোঝাচ্ছে এবং গাছের ক্ষতি হবে এগুলো থাকলে,তাই কেটে ফেলার পরামর্শ দেয়।
এবিষয়ে উপজেলা “উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার” উজ্জ্বল কান্তি মল্লিক “দৈনিক নাগরিক ভাবনাকে” বলেন, এটি
লাক্ষা পোকা,এর চাষ হয়, একটি অতি ক্ষুদ্র পোকা। দেখতে উকুনের মতো। রেশম ও মৌমাছির মতো লাক্ষা পোকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক। পোকাটি প্রাণীজাত বহুমুখী কর্মশক্তি সম্পন্ন। এর নিঃসৃত রজন জাতীয় পদার্থ ও লাক্ষার উপাদান পারফিউম, অস্ত্র, রেলওয়ে, জাহাজ, ওষুধ, চামড়া ও বৈদ্যুতিক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প কলকাখানা এবং জুয়েলারীতে চুরিবালা তৈরী,পিতল ও আসবাবপত্রের বার্ণিশে ব্যবহার হয়।
প্রসঙ্গত, লাক্ষা পোকার নিঃসৃত রস গ্রামোফোন রেকর্ড, সিডি-ডিভিডির ফ্রেম-আউট, ফটোগ্রাফির প্রয়োজনীয় দ্রব্য, সোনা-রূপার ফাঁপাস্থান পূরণ, তালা-চাবি তৈরি, সিলমোহর বানানো, জাহাজের তলদেশে ব্যবহারসহ নানা বহুমুখি কাজে ব্যবহৃত হয়। ফলে, বাজারে এর ভিন্নমাত্রার চাহিদা রয়েছে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশে অত্যন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এই পোকা চাষে কোন জমির প্রয়োজন হয় না। বরই, বাবলা, কড়ই গাছ লাক্ষা চাষের উপযোগী। কিন্তু নানা কারণে সম্ভাবনাময় লাক্ষা চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে না।
কীটতত্ত্ববিদের তথ্য মতে, লাক্ষা পোকার ত্বকের নিচে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা একপ্রকার গ্রন্থি থেকে আঁঠালো রস নিঃসৃত হয়। যা ক্রমশ শক্ত ও পুরু হয়ে গাছের ডালকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। পরবর্তীতে ডালের শক্ত আবরণ লাক্ষা বা লাহা হয়।