সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লা দেবিদ্বারে ইফতার বিতরণ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে (১৭ এপ্রিল) সোমবার ইফতার বিতরণকালে দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভিংলাবাড়ি দক্ষিণ পাড়া বায়তুল আমান জামে মসজিদে।
খবর পেয়ে ওই সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার দেবিদ্বার প্রতিনিধি শাহীন আলম ও বাংলার আলোড়ন দেবিদ্বার প্রতিনিধি আব্দুল আলিমের ওপর হামলা হয়, হামলায় মারাত্মক আহত শাহীন আলমকে কুমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপরদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আহতদের ওপর পুনরায় হামলার দৃশ্য ভিডিও ধারণ করতে গেলে আব্দুল আলীমের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়, পরে ওই মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বায়তুল আমান জামে মসজিদে ইফতার বিতরণকালে ভিংলাবাড়ি গ্রামের শাহ আলম মিয়ার ছেলে বাবুকে (১০) ইফতার দেওয়ার সময় শর্ট পড়ায় সে এবিষয়ে অভিযোগ করায় বাচ্চু মিয়ার ছেলে দুলাল (৩৫) বাবুকে মারধর করেন। ওই ঘটনায় মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম বাবুকে মারধর করার ঘটনায় মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলামের কাছে তার ভাতিজা দুলালের বিচার দাবি করেন। তাজুল ইসলাম মাগরিবের নামাজ শেষে ঘটনার বিচার করার আশ্বাস দেন। নামাজ শেষে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম, মসজিদের কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম, তাহের মিয়ার ছেলে সম্রাটসহ মসজিদের বাহিরে অন্যান্য মুসল্লিদের নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এসময় মারামারির সংবাদ পেয়ে শহিদ মিয়ার ছেলে হাবিবুল্লাহ একটি লাঠি নিয়ে এসে আচমকা পেছন দিক থেকে মসজিদের কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলমের মাথায় আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, তাকে উদ্ধার করতে আসা তাহের মিয়ার ছেলে সম্রাটের (১৮) মাথায় আঘাত করে। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারিতে আরো বেশ কিছু লোকজন আহত হন। আহত শাহ আলম, সম্রাট, নুরুল ইসলাম, দুলাল, আহতদের দ্রুত দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে চিকিৎসা সেবা দেয়ার সময় চিকিৎসকের একটি স্লিপ নিয়ে শাহ আলমের ছেলে সাগর(২৪) ও হাসান(১৭) বাহির থেকে ঔষধ আনতে যাওয়ার সময় হাসপাতাল গেইটে ভিংলাবাড়ি গ্রামের ছাত্রলীগ ২নং ওয়ার্ড সহ-সভাপতি হাসান(১৮)’র নেতৃত্বে দেবিদ্বার সদরের কিছু ছেলে নিয়ে ঔষধ আনতে যাওয়া সাগর ও হাসানের উপর হামলা চালায় এসময় পুরো এলাকা আতঙ্ক ছড়য়ে পড়ে। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রাণভয়ে লোকজন নিরাপদে আশ্রয় নেয়। ঘটনার তথ্য সংগ্রহে যাওয়া আব্দুল আলীম মোবাইল ফোনে ছবি ও ভিডিও ধারন করতে গেলে তাকে দৌড়ে আটকে মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। পরে পুলিশ আসার সংবাদে মোবাইল ফোন ফেরত দিয়ে চলে যায়। এসময় সংবাদ পেয়ে আমাদের সময় পত্রিকার প্রতিনিধি সাংবাদিক শাহীন আলম সংবাদ সংগ্রহে ঘটনাস্থলে আসলে হাসানের নেতৃত্বে শাহীনকে বেধরক পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে।
ঘটনার পর সাংবাদিক শাহীন আলম, আব্দুল কাদের’র ছেলে শাহ আলম(৫০), আবু তাহের’র ছেলে সম্রাট(১৮), বাচ্চু মিয়ার ছেলে দুলালসহ ৪ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অপর এক আহত আবু তাহের’র ছেলে সেলিম(৩৫)কে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি চলে যায়।
এ ব্যাপারে বায়তুল আমান জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও এশিয়ান টিভি দেবিদ্বার প্রতিনিধি নেছার উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, হামলার ঘটনা শুনেছি, তবে আমি মুরাদনগর একটি ইফতার মাহফিলে থাকায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। অপরদিকে স্থানীয়রা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে বিস্তারিত জানালে বিপুলসংখ্যক পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। শুনেছি এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর জানান, আমি নোয়াখালীতে স্বাক্ষ্য দিয়ে দেবিদ্বারের উদ্দেশে আসতেছি। তবে শুনেছি ইফতার বিতরণ নিয়ে মারামারি হয়েছে। পরে দেবিদ্বার সদরের মৃত আবুল হোসেন চেয়ারম্যানের ছেলে বাবু সাংবাদিক শাহীন আলমের ওপর হামলা করেছে। অপরাধী যেই হোক আইনের আওতায় আনতে ওসি তদন্তকে নির্দেশ দিয়েছি।