এক সময় বাংলাদেশ নদীমাতৃক খ্যাত নামে পরিচিত থাকলেও কালের বিবর্তনে বিলুপ্তি হতে বসেছে অসংখ্য নদ নদী । নামে মাত্র রয়েছে নদীমাতৃক বাংলাদেশ। দেশের উল্লেখযোগ্য বৃহৎ নদীগুলো শুকিয়ে এখন ধুধু বালুচর অথচ আড়িয়ালখাঁ শিপসা পশুর নদীর গর্জনে আতঙ্কিত হতো নদীবেষ্টিত আশেপাশের মানুষ।
আর সেই সকল উল্লেখযোগ্য নদী গুলো বিভিন্ন সময় দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকার মহলের অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তে নদীমাতৃক দেশের অসংখ্য নদ নদীর নব্যতা হারিয়ে বিলুপ্তি হতে বসেছে সাথে স্বার্থন্বেষী মহল শুকিয়ে যাওয়া নদী গুলো দখল করে গড়ে তুলেছে আবাসস্থল। অপরদিকে নগরের ময়লা আবর্জনা এবং সময় মতন ড্রেসিং ব্যবস্থা সঠিক কার্যক্রম তদারকির অভাবে দেশের অতি প্রয়োজনীয় নদীগুলোর চিহ্ন হারিয়ে যাওয়ার পথে। তবে নদী পুনরুদ্ধারের জন্য জাতীয় নদনদী রক্ষা কমিটির গুরুত্ব দিলেও কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের বৃহৎ স্বার্থের কারণে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ( বেলার) সংশ্লিষ্ট কর্তাগণ।
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে নগরীর এক আভিজাত্য হোটেলে কনফারেন্সের সময় সমিতির সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা উল্লেখ করে জানিয়েছেন ইতোমধ্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের ১৯৮টি নদীর তালিকা তৈরি করেছে। সেখানে খুলনা বিভাগের নদীর সংখ্যা বলা হয়েছে ১৩৮ টি। একই সাথে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এই বিভাগের ৩৭টি নদীর অস্তিত্ব বর্তমান সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এ সময় খুলনা বিভাগের নদনদী সংরক্ষণে করণীয় বিষয়ক আলোচনা সভায় তথ্য জানানো হয়। খুলনা অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য সংকটাপন্ন নদীগুলোর মধ্য রয়েছে সালমারি, চুনকুড়ি, রুপসা, ভদ্রা, ময়ূর, হরি, হামকুড়া, পশুর, মুক্তেশ্বরী, হরিহর, ইছামতি, গড়াই, কালীগঙ্গা, ভৈরব, কপোতাক্ষ, মধুমতি, নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমারখালী আঠারোবেকি, বেতনা, মাথাভাঙ্গা, বলেশ্বর, ভোলা, মরিচাপ, কাকশিয়ালি, মংলা, মোসিয়াখালী, চ্যানেলখোল, পেটুয়া, ঘ্যাংড়াই, শিবসাহ, তেলিগাতী, গোয়াচাপা, হাড়িয়াডাঙ্গা, সালতা, লাবণ্যবতী ও চুনা নদী।
এ সময় খুলনা বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন অস্তিত্ব সংকটে থাকা ৩৭ টি নদীর ২০ নদীর একেবারেই প্রবাহ নেই। হামকুড়া নদী প্রায় অস্তিত্বহীন দখল অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ বাধ সুইচগেট পলি ভরাট শিল্প বর্জ্য দূষণ দখলের কারণে এসব নদী এখন হুমকির মুখে। এছাড়া আরো কয়েকটি নদীর সংকটের জন্য ঐতিহাসিক কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন ১৯৩৮ সালের দর্শনা ভৈরবের বাগ ভরাট করে কেরু এন্ড কোম্পানি চিনিকল স্থাপন করা হলে যার কারনে মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে ভৈরব নদীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে ক্রমান্বয়ে অস্তিত্ব সংকটে পরে ভৈরব আলোচনার সভায় উল্লেখ করা হয় ১৯৬১ সালে আসাম বেঙ্গল রেল লাইন স্থাপন করতে গিয়ে তৎকালীন নদীয়া জেলার অংশ বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার মধ্য মাথাভাঙ্গা নদীর শাখা কুমার নবগঙ্গা চিত্রা নিম্নভৈরবের উচ্চ মুখে সংকীর্ণ রেল সেতু খানের ফলে বিদ্যমান নদী কাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অপরদিকে ১৯৫০ সালের পর দক্ষিণ অঞ্চলের ফসলহানি এবং বন্যার কারণে তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের অনুরোধপ ক্রুগমিশন নিযুক্ত হয়। সে সময় দেশে চার হাজার কিলোমিটার ভেরিবাদ ৭৮২টি স্লুইচগেট এবং ৯২ টি পোল্ডার নির্মাণ করা হয়। এবং ঐ প্রকল্পে শুধুমাত্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১৫৫৬ কিলোমিটার ভেরি বাদ ৯২টি সুইচগেট এবং ৩৭ টি পোল্ডার নির্মাণ করা হয়। এই নীতির ফলে প্লাবনভূমিকে নদ-নদী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। যার ফলে এই অঞ্চলের অধিকাংশ নদ নদীতে পরিভরাট শুরু হতে থাকে।
এছাড়া ১৯৯৩ সালে কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ ও মাগুরার শেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে এই অঞ্চলের অনেক নদনদী খন্ডিত হয়ে পড়ে বলে আলোচকরা মন্তব্য করেন। পাশাপাশি আলোচকরা ভারতের বৈষম্য কিছু আচরণের কথা তুলে ধরে বলেন আমাদের দেশে যখন খরা মৌসুমও চলে তখন পানির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাই না নদী খাল বিল শুকিয়ে নদী খাল-বিল ফেটে চৌচির হয়ে যায়। আর যখন বর্ষা ও বন্যার মৌসুম শুরু হয় তখন ঠিক সেই মুহূর্তে ফারাক্কা সহ বিভিন্ন জল গেট খুলে দিয়ে দেশে প্লাবিত হওয়ার জন্য তাদের বৈর আচরণের আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এ বিষয়ে আমাদের দেশের সকল জনগণ তথা বিভিন্ন সংগঠনের কর্তারা চরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে এর প্রতিকারের প্রতিরোধ ঘরে তুলতে হবে।