মাসুম বিল্লাহ্ ,বরগুনা : বরগুনা দারুল উলুম নেছারিয়া (এম এ) কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাঃ মামুন-অর-রশিদ এর বিরুদ্ধে অত্র প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাকে ৪৮ ঘণ্টার পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়েছেন অত্র মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার ২৭আগস্ট, সকাল ১০টায় বরগুনা দারুল উলুম নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের রুমে অত্র মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর একটি প্রতিনিধি দল অধ্যক্ষ মামুন-অর- রশিদের সাথে দেখা করেন। ওই সময় অধ্যক্ষের কক্ষে জাতীয়তাবাদী (বিএনপি-র)’ যুবদলের আতাউর রহমান বাবুল ও ফোরকান দুজন নেতাকেও দেখা যায়।
জানাযায় অধ্যক্ষ মামুন অর রশিদের দুর্নীতির বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এবং তার মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাকে পদত্যাগের দাবী জানাবে এটি অধ্যক্ষ টের পেয়ে যুবদলের দুজনকে অফিস কক্ষে এনে শিক্ষার্থীদের ভয় ভিতি দেখানোর চেষ্টা করে।এবং তাদের সাথে মিলানোর ব্যবস্থা করে। যাহাতে শিক্ষার্থীরা আরো উত্তেজিত হয় । শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনেককেই বলতে শোনা যায়, দেশ স্বাধীন করেছি দুর্নীতিবাজদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য আর আপনারা বিএনপি করে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিতে এসেছেন।
এক পর্যায় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ক্ষমা চেয়ে যুবদলের দুই নেতা অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
তার ২ঘন্টা পর, দুপুর ১২টায় অত্র মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ৪০সদস্য স্বাক্ষরিত পদত্যাগ পত্রটি অধ্যক্ষের কাছে জমা দেন। এবং আরো একটি কপি যাহাতে অধ্যক্ষের দুর্নীতির ১১ টি বিষয়ের অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সকল বিষয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ জবাব দিতে না পারলে অধ্যক্ষ কে ৪৮ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
১১টি দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে রয়েছে,,
১.নিজ নিয়োগে অনিয়ম।
২.নিয়োগ বাণিজ্যে শিক্ষক কর্মকর্তা নিয়োগে দুর্নীতি।
৩.এতিমখানা পরিচালনা না করে সকল টাকা নিজে আত্মসাৎ করেন।
৪.২০২৩ সালে tvgsiএর স্ক্রিমের আওতায় পাঁচ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ।
৫.করোনাকালীন সময় মাদ্রাসায় কোন এতিম ছাত্র-ছাত্রী ছিল না, সেখান থেকে সরকারিভাবে ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ।
৬.২০২০ করোনা কালীন আলিম পরীক্ষা চলাকালীন সময় পরীক্ষার ফরম বাবদ বোর্ড কর্তৃক সকল টাকা ফেরত না দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সকল টাকা নিজে আত্মসাৎ করেন।
৭.২০১২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফরম ফিলাপ, বেতন, পরীক্ষার ফি সহ সকল জমাকৃত টাকার ছাত্র-ছাত্রীদের রিসিভ না দিয়ে গ্রহণ ও টাকা আত্মসাৎ করেন।
৮.সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত টিউশন ফি বাবদ প্রতিবছর তিন লক্ষ টাকা করে ১২ বছরে ৩৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন।
৯.বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিল্ডিং বাবদ তদবির করে দেবার আশ্বাস দিয়ে প্রতিবছর চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে আত্মসাৎ।
১০.শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব বাবদ প্রতি মাদ্রাসা থেকে তদবির করে দেবার আশ্বাস দিয়ে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা করে আত্মসাৎ করছেন।
১১.তার গ্রামের বাড়ি ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়নে রায়ভোগ এক দাগে ১০ একর জমি ক্রয় করেছেন, রায়ভোগ নতুন বাজারে প্রায় ২০টি দোকানের ভিটি কিনেছেন এবং বরগুনা শহরে তিনটি ভিটি রয়েছে ও ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসা রয়েছে।
অত্র মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র ফার্স্ট বয় ইয়াসিন আলামিন,আব্দর রহমান, জিসান-সহ অনেক শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ এই মাদ্রাসাটিতে ১২বছর ধরে চাকরি করছেন।আমরা শুনেছি তিনি আসার পর থেকে দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমরা দেখেছি এই মাদ্রাসাটিতে কোন এতিমখানা নেই অথছো তিনি এতিমখানার নাম দিয়ে ২০১৯সালে করোনা কালীন সময় ১০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ, বেতন বাবদ ও বিভিন্ন ক্রিয়া অনুষ্ঠান বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আজ পর্যন্ত এই মাদ্রাসায় কোন ক্রিয়া অনুষ্ঠান হয় নাই।
মাদ্রাসার সকল ছাত্রছাত্রীরা এই অধ্যক্ষের দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগ দাবি করেন।
অত্র মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় মেয়েদের জন্য একটি ওয়াস রুম নাই এ বিষয় অধ্যক্ষের কাছে জানালে তিনি গালিগালাজ করতেন। আমাদের ভয় দেখাতেন। আমরা তার পদত্যাগ চাই।
অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি অত্র মাদ্রাসায় দীর্ঘ ১২বছর চাকরি করি। আজ পর্যন্ত একটি টাকাও দুর্নীতি ও আত্মসাৎ করি নাই।আমি শিক্ষকদেরকে নিয়মিত ক্লাসে থাকতে বলায় তারা আমার উপর ক্ষেপে ছাত্রছাত্রীদের ধারা আমার পদত্যাগ চাচ্ছেন।
একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অত্র প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু সাবেক এমপি তিনি যেভাবে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে বলেছেন আমি সেই ভাবেই করেছি। তার ভঁয়তে আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু করতে পারি নাই।
তিনি এতিমদের টাকার বিষয়ে বলেন,
সমাজসেবা অফিসার আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছেন বিদায়, আমি এতিমখানা বন্ধ করে দিয়েছি। তার জমির বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি এখনো ভাড়া থাকি আমার কোন জমি জমা এবং শহরে কোন বাসা বাড়ি নেই।
তবে তিনি স্বীকার করেন রায়ভোগ বাজারে মাত্র ২টি ভিটি রয়েছে।
৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামের বিষয় তিনি বলেন, আমি যদি সঠিকভাবে হিসাব দিতে
না পারি, তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা চাইলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিব।