কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: দুই বছর যেতে না যেতেই নষ্ট হয়ে গেল ৩৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুষ্টিয়া- খুলনা মহাসড়ক নির্মান।দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালে শেষ করা হয় কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক উন্নয়নকাজ।
এই কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ছিল ৩২১ কোটি টাকা। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। একদফা অতিরিক্ত ২৭ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে কাজ শেষ হয় ২০২২ সালে। খরচ হয় ৩৪৮ কোটি টাকা।প্রায় ১৬৮ কিলোমিটারের এই কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক ভৌগলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ; উত্তরঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনকারী একমাত্র মহাসড়। প্রতিদিনই এ সড়কে দিয়ে খুলনা, ঢাকা, কুষ্টিয়াসহ আঞ্চলিক রুটের হাজার হাজার বাস-ট্রাক চলাচল করে। খুলনা, কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় খুলনা ও কুষ্টিয়া এবং যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত এই বিভাগ কে শিল্প ইন্ডাস্ট্রির বিভাগ হিসেবে ডাকা হয়। বিভাগে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দর। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বন্দর খুলনা বিভাগের যশোরে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রথম রেলপথ এবং এশিয়ার সর্ববৃহৎ চিনিকল কেররু এন্ড কোম্পানি খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলাতে অবস্থিত। এছাড়া কুষ্টিয়ায় রয়েছে ভারী শিল্পাঞ্চল।
মহাসড়কটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন জেলার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
এ প্রতিষ্ঠানের যশোর ও ঝিনাইদহ জেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এই ১৬৮ কিলোমিটার মহাসড়ক সংস্কার, পূণ-সংষ্কার ও পূর্ণ-নিমার্ণের আওতায় বরাদ্দ পায় প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন জেলা অফিস স্ব স্ব জেলায় এই কাজ বাস্তবায়ন করে। মহাসড়ক গঠনের কাজ এখনও কোন কোন জেলায় চলমান।
১৬৮ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ৩৪৮ কোটি টাকা। তবে কাজ শেষের দুই বছরেই সড়কের কুষ্টিয়া, যশোর ও ঝিনাইদহ অংশে ৫৪ কিলোমিটার নষ্ট হয়ে গেছে। কুষ্টিয়া ১১ মাইল ষ্ট্যান্ড থেকে শেখপাড়া বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত তৈরী হয়েছে এলো মেলো গর্ত।আবার ভাদালিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে সাত মাইল বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ছিন্ন বিচ্ছিন্ন গর্তে যানবাহন চালক ও পথচারিরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকিতে চলতে দেখা যায়। অপরদিকে যশোরের পালবাড়ী মোড় থেকে ঝিনাইদহের পাগলা কানাই পর্যন্ত সড়কে তৈরি হয়েছে গর্ত। এছাড়া শহরের মণিহার মোড় থেকে নওয়াপাড়ার রাজঘাট পর্যন্ত পুরোটাতেই রয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এর মধ্যে কুষ্টিয়া ৮, যশোরে পাঁচ ও ঝিনাইদহ অংশে ১২ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সড়কটির নির্মাণকাজের শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল সড়ক উন্নয়নকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো নিয়মনীতি মানেনি। সড়কের পুরনো ইট ও খোয়া তুলে সেটাই আবার ভেঙে গর্তে ব্যবহার করেছে। এছাড়া সড়কে পাঁচ ফুট গর্ত করে ভিত তৈরির নির্দেশনা থাকলেও সে নিয়মও মানা হয়নি। নতুন ইট, বালি ও খোয়া ব্যবহারের কথা থাকলেও সড়কে খুঁড়ে পাওয়া ইট-বালি দিয়েই ফের ভরাট করা হয়েছে।
তবে তমা কনস্ট্রাকশনের সাব-ঠিকাদার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম এসব অভিযোগ আমলে নেননি। তিনি বলেন, ‘কাজের মান নিয়ে সড়ক বিভাগ ও বুয়েট কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। মহাসড়কে ওভারলোডিংয়ের কারণে এ অবস্থা। সড়কের যে স্থানে রাটিং সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে নতুন করে বরাদ্দ হওয়া ঢালাইয়ের কাজও আমরাই করছি।’
সড়কের এ দুর্দশার দায় সবার বলে মনে করেন যশোর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যারা সড়ক ব্যবহার করেন তাদের কতজন নিয়ম মানেন? ওভারলোডের কারণে সড়কটির এ অবস্থা।
সড়ক বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন বরাদ্দে সড়কটির রাটিং হওয়া স্থানে বুয়েট ও সওজ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ১৬ কিলোমিটার ঢালাই করা হবে। এরই মধ্যে প্রথম ধাপে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার কিলোমিটারের কাজ শুরু হয়েছে। ঢালাই শেষ হলে সড়কে যাতায়াতে সমস্যা হবে না বলে আশা করছি।’
n/v