জেলা প্রতিনিধি , কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফও তার ভাই সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান  আতাউর রহমান আতা সহ  গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের দিনে কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংস ঘটনায় আলাদা দু’টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় হানিফসহ ৪৯জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত অন্তত ৬০জনকে আসামী করা হয়।

 বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মামলা দু’টি দায়ের হয় কুষ্টিয়া মডেল থানায়। ওই মামলায় হানিফ ছাড়াও আসামী রয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব  সদর উদ্দিন খান, সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আসগর আলীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। ১৬ আগস্ট দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের চর-থানাপাড়া এলাকার চায়ের দোকানের কর্মচারী কিশোর আব্দুল্লাহ হত্যার দায়ে তার বাবা লুকমান হোসেনের করা মামলায় প্রধান আসামী করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ ১৪জনকে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো ১০/২০জনকে আসামী করা হয়। মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয় নিহত আব্দুল্লাহ কুষ্টিয়া শহরের ফায়ার সার্ভিসের সামনে একটি চায়ের দোকানে কাজ করতো।

 গত ৫ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে তার বাবা লুকমান হোসেন (মামলার বাদী) কুষ্টিয়া শহরের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাাকায় তার জন্য খাবার আনতে বাড়িতে যাচ্ছিল। ওই সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চলমান সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আব্দুল্লাহ। শহরের ছয়রাস্তার মোড়ে পৌছলে মামলার প্রধান আসামী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের নির্দেশে আসামীরা এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় আব্দুল্লাহ দৌড়ে পালাতে গিয়ে মামলার দুই নং আসামী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা তার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে বুকে গুলি করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কুষ্টিয়ার আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় মাহবুবউল আলম হানিফ ও আতাউর রহমান আতা ছাড়াও আসামী করা হয়েছে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষার, কুষ্টিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ধীমান, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, কাটাইখানা মোড় এলাকার সোহেল রানা, কালিশঙ্করপুর এলাকার আরিফ হোসেন, ঈদগাহপাড়া এলাকার রণি, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজপাড়া এলাকার মিন্টু, একই এলাকার আনোয়ার হোসেন, ঈদগাহপাড়া এলাকার হান্নান বিশ্বাস, কোর্টপাড়া নারিকেলতলা এলাকার সাইদুল ইসলাম এবং কোর্টপাড়া এলাকার তরুন ও নিপুন।

এছাড়া ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১০/২০জনকে আসামী করা হয়। অন্যদিকে ১৫ আগস্ট রাতে আরো একটি হত্যা মামলা দায়ের হয় কুষ্টিয়া মডেল থানায়। গত ৫আগস্ট বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কুষ্টিয়া শহরতলীর হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের শালদহ গ্রামের মৃত নওশের আলীর ছেলে স্বর্ণকার বাবু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিলে তাকে থানামোড়ের পাশে আড়ংয়ের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কোদালকাটি গ্রামের রহিদুল ইসলামের ছেলে রাইসুল হকের দায়ের করা মামলায় ৩৫জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০/৫০জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার প্রধান আসামী করা হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতাকে। অন্যান্য আসামীরা হলেন যথাক্রমে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাসিব কোরাইশী, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস, পেয়ারাতলা এলাকার হাবিবুর রহমান হাবি, ১৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীর রেজাউল ইসলাম বাবু, মহিবুল কমিশনার ও তার ভাই মাহাবুল, শেখ আহম্মেদ কৌশিক ওরফে বিচ্ছু কমিশনার, হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মন্ডল, কিশোর কুমার ঘোষ ওরফে জগৎ কমিশনার, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সদস্য ফজলে করিম খোকা, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী, শহর আওয়ামী লীগ নেতা পল্লব, ব্যারিস্টার গৌরব চাকী,জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ, এরশাদ নগর এলাকার মানিক, ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তানভীর নোবেল, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রুবেল, পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাউজিং এলাকার মধূ, মিলপাড়া এলাকার রঞ্জু, কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক আল মুনিম, মিনাপাড়া এলাকার সাহাজুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ, ছেঁউড়িয়া এলাকার নূর মোহাম্মদ পুকাড়ী ও তার ছেলে রাজিব হোসেন, কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন, কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম। এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে ৪০/৫০জনকে।

 মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানার  ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও‌সি) মাহফুজুর রহমান।