ইমাম হোসেন হিমেল, কলাপাড়া পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ জন্মের পর থেকে আমৃত্যু কেউ সুখে বসবাস করেন আবার কাউকে সারা জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। তাদের জীবনের সংগ্রাম যেন শেষ হয় না। এমনই এক সংগ্রামী নারী কলাপাড়ার শামসুন্নাহার।
৫০ বছর বয়সী শামসুন্নাহার থাকেন কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার-চর বালুর ধুপে ১৫ বছর আগে স্বামী রফিক বিশ্বাস ছেড়ে চলে যান।
তার দুটি ছেলে দুটি মেয়ে ৪ সদস্যের সংসারের দায়িত্ব এখন তিনি একাই নিয়েছেন । কিন্তু পেট তো চালাতে হবে। অভাবের তাড়নায় জীবনের তাগিদে প্রচন্ড ডেউ উপেক্ষা করে নেট টেনে পোনা ধরছেন বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই। আজকাল সবক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ সমানভাবে থাকলেও নেট টেনে পোনা ধরার কাজে সাধারণত তাদের দেখা যায় না। কিন্তু কলাপাড়ার শামসুন্নাহার ছেলে বউয়ের ও মেয়ে জামাইদের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে এ কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন ছোট মেয়ের মুখে ভাত তুলে দিতে।
প্রথমে কিছু লোক তার এ নেট টানাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। অনেকেই হাসি-ঠাট্টা ও সমালোচনা করতো। আবার কিছু লোক তাকে সহযোগিতাও করেছেন।
ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার চরে কৌতূহলবসত শামসুন্নাহারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, জন্ম হয় বাবার অভাবের সংসারে। বিয়েও হয়েছিল এক দিনমজুরের সঙ্গে। সেখানেও অভাব সংসারও বেশিদিন স্থায়ী হলো না। ১৫ বছর আগে স্বামী ছেড়ে চলে যায় রেখে যায় দুই মেয়ে দুই ছেলে । অনেক কষ্টে এক ছেলে ও এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি ।
নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পরে চোহে মুহে অন্ধকার নেমে আসে। কোনো একটা কাজ জোগারে মরিয়া হইয়ে উঠি। মানসের বাসায় কাম করি। ছেলে মেয়ে লালন পালন করার দায়িত্ব নিয়েই এই সংগ্রামে নামা ।
কেমন ইনকাম হয় জানতে চাইলে শামসুন্নাহার বলেন, কোনোদিন হয়তো ২০০-৩০০ টাহার পোনা বিক্রি করি আবার মোটেও অয় না। আগের মত সাগরে নামতে পাড়িনা, বয়সের সাথে সাথে রোগ বেড়েছে দ্বিগুন, টাকার অভাবে টেস্ট করাইয়া দেখতে পাড়িনা কি কি রোগ আছে শরিলে। আগে যেমন রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাগরে যাইতাম এখন আর পাড়িনা।
আমার টাহা নেই যে একটু বিশ্রাম নিবো এই অসুস্থ শরিল নিয়েই রোজ কাজে যেতে হয় । যা ইনকাম অয় তা দিয়ে কষ্ট কইরে চলতে অয়। নিজের বাড়ি নাই জমি নাই। সরকারি জায়গায় থাহি কোনো রকম ঘর তুইলে। ভালো করে ঘর উঠাইতেও পারি না, টাহা নাই বলে।
জীবন যুদ্ধে হার না মানা এ নারীর মতে, দেশের সব নারীকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিত। লোকে কী বললো তার দিকে না তাকিয়ে কাজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তার কর্মজীবনেও প্রথম প্রথম কাজ করতে তিনি অস্বস্তি বোধ করতেন। ভাবতেন লোকজন কে কী বলবে। এখন তার কাছে সেটা আর কোনো ব্যাপার বলে মনে হয় না, তবে বয়সের ভারে দিন দিন ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন এসব যোদ্ধারা ।
ওই এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম, নাগরিক ভাবনাকে বলেন,শামসুন্নাহার, আমরা ছোট বেলা থেকে দেখেছি। অবিরাম জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক নারী তিনি। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিনিয়ত বেঁচে আছেন। এক সময় তিনি আমাদের বাসায় কাজ করতেন। আমরা তাকে শামসুন্নাহার আপা বলে ডাকতাম। এখন নিজেই নেট টেনে পোনা ধরছেন।
তিনি আরও বলেন, কোনো কাজকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। নারীরা অনেক সময় চক্ষুলজ্জার ভয়ে ঘর থেকে বের হতে চান না। কিন্তু শামসুন্নাহার সেসব কথায় কান না দিয়ে নিজেই নিজের মতো করে কাজ করে চলেছেন চালিয়েছেন সংসার ।