টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র ঐতিহাসিক তালতলা চত্বরে বিগত ৩ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য অনুপম শাজাহান জয় ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সাইদ আজাদের নেতৃত্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আন্দোলনরত সাধারন শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।বিগত ৫ আগষ্ট সারাদেশের ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের মুখে সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা তড়িঘড়ি করে পদত্যাগ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সার্বিক সহযোগিতায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর,দীর্ঘ পনেরো বছরে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ স্বৈরশাসন মুক্ত হয়।এর দীর্ঘ প্রায় ২০/২২ দিন পর সখীপুরের সেই নেক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার নেতৃত্বদানকারী সাবেক এমপি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে মোট ১৬৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০০/১৫০ জনকে আসামি করে একটি সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয় সখীপুর থানায়।কিন্তু উক্ত মামলার এজাহারে মূল ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন নির্দোষী ব্যক্তিদের নাম আসায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়।তথ্য নিয়ে জানা যায়,ঘটনার সময়ের অনেকগুলো ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাথে সাথে প্রকাশ হয়,সেই ভিডিওগুলোতে এজাহার নামীয় বেশিরভাগ আসামিকেই দেখা গেলেও,নির্দোষী দাবিদার কাউকেই দেখা যায়নি।এদিকে নির্দোষী দাবিদার আব্দুল লতিফ মিন্টু (সাধারণ সম্পাদক সখীপুর দলিল লেখক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডার কল্যাণ সমিতি) এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান,তিনি কোন ভাবেই রাজনীতির সাথে সংপৃক্ত নন,তবুও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমাদের দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামিলীগ নেতা মীর গোলাম হোসেন তার ছেলে বিএনপি করার সুবাদে আমার নামটি তার ছেলে আলী আশরাফকে দিয়ে মামলায় ডুকিয়ে দিয়েছেন।তিনি আরও বলেন,এখানে আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোনো মতেই বিএনপিকে দোষারোপ করছিনা,কারণ মীর গোলাম হোসেন ও তার ছোট ভাই সখীপুর উপজেলা আওয়ামিলীগের প্রচার সম্পাদক মীর শামসুল আলম আমাকে বেশ কিছুদিন যাবৎ পদত্যাগ করতে হুমকি দিয়ে আসছিলেন।এদিকে দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সখীপুর প্রতিনিধি ফলজুল হক বাপ্পা এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন,”আমি ব্যক্তিগতভাবে যদিও আওয়ামিলীগ করি,তবুও এ ঘটনার দিন আমি সখীপুরেই উপস্থিত ছিলামনা।যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন যে,আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত,তবে আইনে যে শাস্তি হবে আমি তা মাথা পেতে নিব”।হারুন আজাদ নামক সখীপুর পৌর সভায় কর্মরত একজন নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষী দাবি করে বলেন,”আমি পূর্বে আওয়ামিলীগের রাজনীতি করেছি এটা সত্য,কিন্তু অনেক বছর যাবৎ পৌরসভায় চাকরি হওয়াতে আমি রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিয়েছি অনেক আগেই,দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ামিলীগের রাজনীতির সাথে আমার কোন সংপৃক্ততা নেই,তবুও আমাকে এ ঘটনায় কেন আসামি করা হলো?আমি নিজেও এরকম সন্ত্রাসী হামলার বিচার কামনা করি,কিন্তু সেই ঘটনায় যার আশেপাশেও আমি ছিলাম না,সেই ঘটনায় আমাকে কোন দোষে আসামি করা হলো”?একই ভাবে তারেক সিরাজ (সখীপুর বাজার মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক) নিজেকে নির্দোষী দাবি করে বলেন,যে ঘটনার তীব্র নিন্দা আমি নিজেও জানাই,যে ঘটনার আগে পিছে কোথাও আমি জড়িত নই,সেই ঘটনায় হওয়া মামলায় আমি কি অপরাধে আসামি হলাম?আমি তো আওয়ামিলীগের কোন নেতাও নই,তবে আওয়ামিলীগ সমর্থন করি এটা ঠিক “।একই ভাবে আরও বেশ কয়েকজন নিজেদের নির্দোষী দাবি করে মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।অভিযোগকারী সকলের দাবি একটিই তা হলো,ঘটনার সাথে জড়িত সকল অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক,কিন্তু যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়,দয়া করে তাদের যেন এমন একটি স্পর্শকাতর ঘটনার মামলায় বিনাদোষে হয়রানি না করা হয়।এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট সুবিচার প্রার্থনা করেন তারা।
উল্লেখ যে,অত্র মামলাটি বিধিবহির্ভূত ভাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন সমন্বয় অথবা সন্ত্রাসী হামলায় আঘাতপ্রাপ্ত কোন ভিকটিমকে বাদী না করে,বাদী করা হয়েছে সখীপুর পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক মোর্শেদুল হক অন্তরকে।সেই সাথে কয়েকজন নির্দোষী ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করে ঘটনাটিকে ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করার হীন প্রচেষ্টায় বিএনপির রাজনৈতিক সুনাম ক্ষুন্নের গভীর চক্রান্তসহ এমন নেক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে মামলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার করবার গভীর ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।