শ্রীপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দলতন্ত্রের আঁতর ঘর
সর্বশেষ পরিমার্জন:
রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪
৪০
বার পঠিত
»»»»» »»»»»
আবু সাঈদ : গাজীপুরের শ্রীপুরে শাসক দলের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তেলবাজ চাটুকার কিছু শিক্ষক শ্রীপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকেও দলতন্ত্রের আঁতর ঘরে পরিণত করেছিল। দলীয় মন্ত্রী এমপি উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতাকে পুঁজি করে শিক্ষক রাজনীতির নামে শিক্ষা অফিসে, নির্দিষ্ট মন্ত্রী বা নেতার ছবি ব্যবহার করে বা নাম ভাঙ্গিয়ে দালালি, স্বজন প্রাতি, শিক্ষক হয়রানি, মতো ঘটনা ঘটেছে বিগত দিনে। প্রথম দিকে শিক্ষকদের কল্যাণে বিভিন্ন গ্রুপে নাম ভাঙ্গিয়ে নামে বেনামে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের গড়ে উঠলেও শিক্ষকদের কল্যাণে ভূমিকা রাখার চেয়ে শিক্ষক হয়রানি,বদলী বানিজ্য দলীয় ক্ষমতা প্রদর্শন বা একটি নির্দিষ্ট নেতা বা দলের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করতে পছন্দ করতেন।
উল্লেখ্য যে, মাওনা জেএম এর সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিমকে রাজনীতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে পানিশমেন্ট বদলি, সারা বাংলাদেশে বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা কেওয়া পশ্চিমখন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিনকে এলাকার গুটিকয়েক নেতার মতকে প্রাধান্য দিয়ে নিজ উপজেলার বাইরে টাঙ্গাইলের দুর্গম স্থানের বদলির আদেশ এবং ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনকে শিক্ষার্থীদের সামনে বিদ্যালয়ের কক্ষে লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটেছে। তৎসময়ে তথাকথিত নামধারী শিক্ষক নেতারা বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ বা একজন শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করতে সাহস দেখায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষক মারধরের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সাধারন শিক্ষকরা প্রতিবাদ করলেও নামধারী তথাকথিত শিক্ষক নেতারা বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করেনি।বরং দলীয় এমপি মন্ত্রীদের কে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করেছে শিক্ষক নেতা নামধারী দালালরা।
টেংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা ইয়াসমীন মাসুমা (শ্রেষ্ঠ শিক্ষক২০১৭) প্রাণনাশের হুমকি এবং সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। এ সকল শিক্ষক নেতারা দলবাজি চাঁদাবাজি, ফেসবুকে নিজ দলের নেতাকর্মীদের ছবি আপলোড নিয়ে ব্যস্ত ছিল বেশিভাগ সময়। সাধারণ ও নিরহ শিক্ষকরা এসব শিক্ষক নেতাদের কর্মকান্ডে অনেক সময় বিব্রত বোধ করত।অনেক শিক্ষক আবার আত্ম সম্মানের ভয়ে রাজনীতি থেকে ইস্তেফা দিয়েছেন। বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন তৎসময়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতি মন্ত্রী অধ্যাপিকা রোমানা আলী টুসিকে বিস্তারিত খুলে বললেও তার শাস্তিমূলক বদলী ব্যাপারে নিরব ভূমিকা পালন করেন। বরং তিনিই দলের এলাকার কর্মীর কথায় উক্ত প্রধান শিক্ষকে বদলী করতে মন্ত্রনালয়কে নির্দেশ দেন বলে জানা যায়। এসব নামধারী শিক্ষক নেতারা শ্রেণিকক্ষ বাদ দিয়ে বাজারে,শিক্ষা অফিসে সময় কাটাতেন।
একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,শাসক দলের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তেলবাজ চাটুকার কিছু শিক্ষকগুলো হলেন ভাংনাহাটি মমতাজিয়া সঃ প্রাঃ বি প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম, সাতখামাইর সঃপ্রা বি সহ শিক্ষক এমদাদ, টেংরা সরকারি প্রাঃ বি প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক, গাজীপুর ইউনিয়নের সহ শিক্ষক আঃ রউফ নাম উল্লেখযোগ্য। শিক্ষক নেতাদের নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং এবং দলাদলির ফলে তেলিহাটি ইউনিয়নের সহকারী শিক্ষক ফরহাদ মাস্টারকে কাপাসিয়া বদলি করেন এবং পরবর্তী সময়ে নিজ উপজেলায় চলে আসেন এ নিয়ে শ্রীপুর উপজেলায় সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকগন প্রায়ই দেন দরবার করে যা শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করেছে।
বাংলাদেশে বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা কেওয়া পশ্চিমখন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দাওয়াত কার্ডে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ২/১ জনের নাম না দেওয়ায় খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সহকারী শিক্ষক রুহুল আমিনকে মারধর করে ও লাঞ্ছিত করে।আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রতিবাদ করিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিচার চাই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় বিষয়টি সমাধান করে দেন। তার এক মাসের মাথায় আমাকে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় তাতশ্রী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি চরের মধ্যে, আমাকে সেখানে বদলি করে দেওয়া হয়। তারপর আমি উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, বিভাগীয় উপ- পরিচালক মহোদয়,ডিজিমহোদয়, ও সচিব মহোদয়ের কাছে গিয়েছি এবং কেন বদলি করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছি। উনারা প্রত্যেকে বলেছেন প্রাথমিক ও শিক্ষা প্রতি মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় বদলি করা হয়েছে। উনাদের কারো কোন কিছু করার নেই।
তিনি আরও জানান, আমি তখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতি মন্ত্রী মহোদয় এর বাসায় যাই এবং সব ঘটনা খুলেবলি।আমি পরপর চার দিন ওনার বাসায় যাই এবং উনাকে বলি উনি চার দিনই আমার কাছ থেকে দরখাস্ত নেয় এবং বিষয়টি দেখবে বলে আমাকে আশ্বাস দেন কিন্তু উনি আমার বদলির আদেশটি আর বাতিল করেন নাই এবং বিষয়টি নিয়ে আর কোন কিছুই করেন নাই।
আমার বদলীর আদেশটিতে লেখা ছিল আদেশটি অনতিবিলম্বে কার্যকর করাহবে।আমি তখন দিশেহারা। শুরু হলো আমার নির্যাতনের পালা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয় আমাকে খবর দিয়ে এক সপ্তাহের মাথায় বলেন আমাকে রিলিজ দিয়ে দিতে হবে আমি উনার হাতে পায়ে ধরি রিকুয়েস্ট করি আমাকে কয়েকটা দিন সময় দেয়ার জন্য অথবা একদিন সময় দেয়ার জন্য। আমি যেন ছুটি নিতে পারি। প্রতি মন্ত্রী মহোদয় যেহেতু মুখে মুখে বলেছেন আমি উনার সাথে আর একবার জিজ্ঞেস করি যে উনি আমাকে কি করবেন কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয় আমাকে একদিনের সময় দেননি।
সাথে সাথে উনি আমাকে রিলিজ লেটার ধরিয়ে দেন। আমি কোন পথ না পেয়ে বাড়িতে এসে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা ছুটির কাগজ পত্র পাঠাই। সেই ছুটিটি হাতে হাতে তারা গ্রহণ করেন নাই। বাধ্য হয়ে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আমি পরের দিন সেই ছুটির কাগজ পাঠাই। তারপর থেকেই শুরু হলো দৌড়। মন্ত্রীর বাসা, ডিজি অফিস সচিবালয়। কোন কাজ হলোনা। এদিকে বেতন বন্ধ। মানুষের কথা। বাইরে বের হতে পারি না অনেকের কাছে গিয়েছি, অনেক নেতাদের কাছে গিয়েছি, শিক্ষকদের কাছে গিয়েছি, কেও কোন সহায়তা করেনি। আমি কোন উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল ১ এ একটি রিড করেছি। তার জন্য আমি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হয়েছিলাম সেটিও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আজ ৩ মাস ছুটির কাগজ পাঠাচ্ছি।জানিনা এর শেষ কোথায়? আমি সারা বাংলাদেশের শিক্ষক সহ সকলের কাছে এর জবাব ও বিচার চাই। আমার বয়স ৫৩ বছর। আমি ২৪ বছর নিবেদিত প্রান প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি।আমাদের বিদ্যালয়টি পরপর দুইবার উপজেলায় শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ে হয়েছে। ২০২৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সভাপতি হয়েছেন এবং আমি শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষিকা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছি। আমি কোনো অন্যায় করিনি।আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই অথচ ৫৩ বছর বয়সে ১০০ কিঃমিঃ দূরে অন্য জেলায় কেন আমাকে বদলি করা হলো জাতীর কাছে প্রশ্ন?