মো. মিজান , কলাপাড়া প্রতিনিধি : শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষাই প্রাণশক্তি। তবে প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও এমপিও ভুক্ত হয়নি সুলতানগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসা। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক কর্মচারীর হতাশ হয়ে পড়েছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা শিক্ষকতার পাশাপাশি এখন অন্য কাজ করছেন। এ অবস্থায় মাদ্রাসাটির দ্রুত এমপিও ভুক্তর দাবী জানিয়েছেন শিক্ষকসহ এলাকাবাসী।পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় ২০২৩ সালে বেশ কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হন, ২০২৩ সালেই তালিকা ভুক্ত হলেও একজন কাম্য কম থাকায় এমপিও ভুক্ত থেকে বাদ পড়েন সুলতানগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসাটি । উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে নীলগঞ্জ ইউপির ১ নং ওয়ার্ডের সুলতানগঞ্জ গ্রামে মাদ্রাসাটি অবস্থিত।২০০১ সালে মাদ্রাসায় পাঠদানের অনুমতি পেয়ে এলাকার ছেলে ও মেয়েদের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা। শুরু থেকেই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক অনেক এগিয়ে , যা অনন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক ভালো। তারপরও প্রতিষ্ঠানটি এবার এমপিওভুক্ত হয়নি। ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষকসহ মোট ১৭ জন শিক্ষক রয়েছে। বর্তমানে মাদ্রাসায় মোট পাঁচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। ২০১৮/২০২২/২০২৩ সালে এমপিও ভুক্তের জন্য আবেদন করেও কোন সুফল পায়নি শিক্ষকরা। ইতিমধ্য তাদের সরকারি চাকরির প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে গেছে। অন্য কোন চাকরিতেও আবেদন করার সুযোগ নেই।সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাদ্রাসাটি এমপিও ভুক্ত না হওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এমপিও ভুক্ত না হওয়ার কারণে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কেউ কেউ জীবন-জীবিকার তাগিদে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের আশায় স্কুলে পড়ে আছেন। ওই এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা বলেন, ভাবতেই অবাক লাগে শিক্ষকরা চাকরি করেন, কিন্তু কোন বেতন ভাতা পান না। আর এভাবে দীর্ঘদিন বিনা বেতনে শিক্ষকদের পক্ষে পাঠদান করা সম্ভব নয়।হোসেন মোল্লা নামে এক অভিভাবক বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। শুধু সাইনবোর্ড রয়েছে এবং পাঠদানের কোনো যোগ্যতা রাখে না। সেসব প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত হয়েছে। কলাপাড়ায় বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু আমাদের এলাকায় এত সুন্দর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও হয়নি। আগামীতে যখন আবারও এমপিওভুক্ত করা হবে, এ প্রতিষ্ঠানটি যেন সেখানে অগ্রাধিকার পায়।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, ১৯ বছর ধরে মাদ্রাসাটিতে শ্রম দিয়ে আসছি। এ জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৫ কিলোমিটার আসা-যাওয়া করতে হয়। কিন্তু কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায় না। ফলে পড়ানোর পাশাপাশি বাড়ির জমিতে কৃষিকাজ করি। আট সদস্যের পরিবার নিয়ে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। স্কুলটি আজ-কাল এমপিও হবে বলে বছরের পর বছর পার হয়ে গেছে। এদিকে বয়স শেষ হওয়ায় অন্য কোনো চাকরির আবেদন করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই এমপিওর আশায় এখন স্কুলে পড়ে আছি।
কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমি সুপারভাইজার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার(অতিরিক্ত) মো. মনিরুজ্জামান খান জনান, সুলতানগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসাটিতে বেশকিছু সমেস্যা রয়েছে, এর মধ্যে মাদ্রাসাটির ম্যানেজমেন্টের ও কিছু সমস্যা রয়েছে। এমপিওভুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন করতে হয়, অনলাইনে আবেদন করতে গেলে মাদ্রাসাটি দাখিল হলেও অনলাইনে আলিম মাদ্রাসা দেখা যায়, যা সংশোধন করার জন্য প্রধান শিক্ষক কে কয়েকবার অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি সমাধান হলেই আমরা এমপি ভুক্ত করার জন্য পূনরান আবেদন করব।