আব্দুর রহিম রানা: যশোরের সীমান্ত উপজেলা চৌগাছার মাদরাসা ছাত্র মারুফ হোসেন (১৩) হত্যা মামলায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিস্কৃত নেতা বাবুসহ ৪ আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও সাবেক ইউপি সদস্য হযরত আলীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরআগে ২০১৯ সালের ২৬ মে হত্যা মামলার ১০ আসামিকে বেকসুর খালাস দেয় খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
নিহত মারুফ হোসেন উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের স্বর্পরাজপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মহিদুল ইসলাম তোতার ছেলে ও স্বর্পরাজপুর দাখিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলো।
এদিকে, বুধবার বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ের পর (বুধবার রাতে) নিহত মারুফ হোসেনের মা আবিরুন্নেছো বলেন, সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সৎ ভাতিজা আমার ছোট ছেলে মারুফকে (১৩) দোকানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করে। নিখোঁজের ৭দিন পর গ্রামের পাশ্ববর্তী জগদীশপুর তুলা বীজ বর্ধন খামারের পাশের একটি বাগানে তার শরীরের টুকরা টুকরা অংশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ৭জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো কয়েকজন অজ্ঞাত আসামি করে চৌগাছা থানায় হত্যা মামলা করি।
এক পর্যায়ে মামলাটি যশোর থেকে খুলনায় দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়। খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল ২০১৯ সালের ২৬ মে মামলার ১০ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দেয়। তিনি বলেন, আমার স্বামী দেশের বাইরে থাকেন। তাই ছেলে হত্যার বিচার পেতে নিজেই হাইকোর্টে আপিল করেছিলাম। হাইকোর্ট ৪ জনের মৃত্যুদন্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন। এই রায়ে আমি সন্তুষ্ট, রায় কার্যকর হলে আমি খুশি হবো।
উচ্চ আদালতে আপিলকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এমএ মুনতাকিম ও চৌধুরী শামছুল আরেফিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন-ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
আপিলকারীর আইনজীবী চৌধুরী শামছুল আরেফিন বলেন, হাইকোর্ট স্বর্পরাজপুর গ্রামের মৃত আজহার আলী মন্ডলের ছেলে সুলাইমান মন্ডল, গওহর আলীর ছেলে আবুল বাশার, নুর ইসলাম ওরফে লালুর ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক (হত্যাকান্ডে নাম আসার পর বাবুকে বহিস্কার এবং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করা হয়) বাবু ও মিজানুর রহমানের ছেলে আজাহারুল ইসলাম ওরফে বুড়োকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন।
এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামি হলেন-গ্রামের মৃত আজহার মন্ডলের ছেলে এবং সাবেক ইউপি সদস্য হযরত আলী মন্ডল।
চৌধুরী শামছুল আরেফিন বলেন, মারুফকে কারা অপহরণ করে হত্যা করে, তা আসামি আজহারুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসেছে। এই জবানবন্দি সাক্ষী দিয়ে সমর্থিত। অথচ বিচারিক আদালত তা বিবেচনায় না নিয়ে নৃশংস ওই হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বেকসুর খালাস দেন। তিনি বলেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, চাক্ষুষ সাক্ষীর সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় নিয়ে হাইকোর্ট চারজনকে মৃত্যুদন্ড এবং বয়স বিবেচনায় হযরত আলী মন্ডলকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন।
এরআগে ২০১৯ সালের ২৬ মে খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল দন্ডপ্রাপ্ত পাঁচজনসহ ১০ আসামির সবাইকে খালাস দেয়। খালাস পাওয়া পাঁচজন হলেন-যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হযরত আলী মন্ডলের ছেলে বিল্লাল হোসেন মন্ডল ও টুটুল মন্ডল, আবুল কাশেম কালুর ছেলে শফিকুল ইসলাম ও ইশার আলীর ছেলে ইকরামুল হোসেন এবং ঝিনাইদাহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের শমসের মন্ডলের ছেলে খলিল মন্ডল।
মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট সকালে চৌগাছা উপজেলার স্বর্পরাজপুর গ্রামের মহিদুল ইসলাম তোতার ছেলে মারুফ হোসেন বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। এরপর খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ১৬ আগস্ট চৌগাছা থানার জগদীশপুর তুলা বীজ বর্ধন খামারের পাশে কান্দি মৌজায় অবস্থিত এক ব্যক্তির বাগানে মাথাবিহীন হাত-পা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পরদিন মারুফের মা হযরত আলীসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চৌগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সে সময় এ হত্যা মামলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন গ্রামবাসী। বুধবার রায়ের খবর এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয়রা উল্লাস প্রকাশ করেন।