মোঃ রেজাউল হক রহমত ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : মানবতা পথে পথে বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে যাচ্ছেন সরকারিসহ বেসরকারি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের কাছে প্রধান সড়ক থেকে পানি কমলেও স্রোতের বেশ তীব্রতা। মোটরসাইকেলে ছুটে চলা যুবক মাঝ বয়সীকে ব্যাগ হাতে হাঁটতে দেখে দাঁড়ালেন। বললেন পার করে দেওয়ার কথা। মাঝ বয়সী ওই ব্যক্তি বিনয়ের সঙ্গে এক বৃদ্ধকে দেখিয়ে উনাকে সহায়তা করতে বললেন।
আখাউড়া রানার্স নামে একটি সংগঠনের টি-শার্ট পরা যুবক তখন বৃদ্ধকে নিয়ে পানির জায়গা পাড়ি দেন।
ব্যবসায়ী ও হেফাজত ইসলামের নেতা মো. বেলাল হোসেন একটি রিকশায় পানি উঠাচ্ছিলেন। কথা হলে জানালেন, দুর্গতদের জন্য বিরিয়ানি রান্না করেছেন। সঙ্গে পানিও দিবেন বলে কিনতে এসেছেন।
মোটরসাইকেলে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি। কথা হলে জানা গেল, সকালে নাশতাও করেননি। যেভাবে পারছেন এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন।
পথে দুই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ডাকে সাড়া দিয়ে সাধারণ একটি হোটেলে পোনা মাছ ভাজি আর ভাত খান সরকারের ওই কর্মকর্তা।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আখাউড়ার বন্যা দুর্গত এলাকা ঘুরতে গিয়ে মানবিক এমন অনেক বিষয় চোখে পড়ে। বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে গিয়ে যে যার মতো করে পারছেন এগিয়ে আসছেন। সরকারি উদ্যোগের চেয়ে বেসরকারি উদ্যোগ বেশি লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে ত্রাণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের এগিয়ে আসাটা ছিল চোখে পড়ার মতো।
মানবিক কাজে কম যাননি ছোট্ট শিশু তাহসিন। মাদরাসাপড়ুয়া তাহসিন ত্রাণ নিয়ে বেড়িয়েছে তার বাবা আব্দুল হান্নানের সঙ্গে। দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আব্দুল হান্নান জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিশুদের কান্না দেখে সেও ব্যথিত হয়ে ছুটে চলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত তিন দিনের মতো গাজীর বাজার এলাকার বিধ্বস্ত সেতুর কাছে মানুষের বেশ ভিড়। তবে ভিড়টা অন্যদিনের মতো কারণে নয়। এত দিন লোকজন এ জায়গাটায় দেখতে এলেও শুক্রবার এসেছিলেন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে। অনেককে সাঁতরে কষ্ট করে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে যেতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ব্যানার টানানো একটি ট্রাক চোখে পড়ে গাজীর বাজার এলাকায়। আশুগঞ্জের ব্লাড ফর আশুগঞ্জ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের সদস্যদের একটি কাভার্ড ভ্যান থেকে খাদ্যসামগ্রী নামাতে দেখা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কাউট দলও সহায়তার জন্য নানা পণ্য নিয়ে ছুটে আসে। কমফোর্ট এইড ইন্টারন্যাশনাল ও টিএসএস নামে সংগঠনের উদ্যোগে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ৬০০ প্যাকেট খাবার বিতরণ করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী উদ্যোক্তা জেবিন ইসলামের উদ্যোগে প্রচুর পানি বিতরণ করা হয়। শুকনা খাবার বিতরণ করেছে বিজিবি।
মানবিক কাজে এগিয়ে এসেছে বিএনপিও। শুক্রবার রাজনৈতিক এ সংগঠনের সহযোগী ছাত্রদলের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। জেলা যুবদলের নেতৃবৃন্দও এগিয়ে আসেন এ কাজে। এ ছাড়া সাবেক বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন হাজারীর উদ্যোগে দুর্গতদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়।
কথা হয় মাসুদ রানা নামে এক স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাঙা সেতুর পাশে নির্মাণাধীন সেতু দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা দিয়ে পারাপারে লোকজনকে সহায়তা করা হচ্ছে। আর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন এটা দিয়ে না যান সেটিও খেয়াল রাখা হচ্ছে।’
উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বাড়ি পানি উঠে সব তলিয়ে যায়। পরে আশ্রয়কেন্দ্রে এসে পড়ি। এখানে যারাই এসেছে কিছু না কিছু দিয়ে গেছে। খাবার নিয়ে আমাদের কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি জানান, দুই দিন ধরেই সরকারি সহায়তা দুর্গতদের মাঝে পৌঁছানো হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার ঘুরে জানা গেছে, অনেক সংগঠনও এগিয়ে এসেছে সহায়তা করার জন্য। কেউ খাবারের জন্য কষ্ট করছে এমন কোনো তথ্য নেই।