আজিজুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হরিনা বাগবাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের পদত্যাগের দাবীতে ১ দফা আন্দোলন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। রবিবার (১৮’আগষ্ট) শিক্ষার্ধীদের আন্দোলনের তোপের মুখ প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম প্রতিষ্ঠান ছেড়ে পালিয়ে যান বলে জানা যায়। পরে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরাদের সাথে সকল শিক্ষক শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার একাত্বতা ঘোষণা করে আন্দোলন চলমান রেখেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, অতিরিক্ত টাকা আদায়, সেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোসহ নানা অনিয়ম- দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।এসব অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে তার পদত্যাগের দাবিতে এক দফা দাবি ও মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষকগণ ও অভিভাবকেরা।আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ২০০১ সালে বিদ্যালয়ে যোগদান করে পরবর্তীতে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে অবৈধ ভাবে প্রধান শিক্ষক এর পদ নেন এবং তার পর থেকেই অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং লেয়াজুবৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে ।এসময় শিক্ষার্থীরা আরও জানান, পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক কৌশল পরিবর্তন করে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে নানা অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করেন। যেমন নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি এর নামে অতিরিক্ত ফি আদায়, বিনা রশিদে অর্থ আদায়, ভুয়া বিল করে টাকা আত্মসাত, প্রকাশ্যে ধুমপান করা সহ উপবৃত্তির শিক্ষার্থী নির্বাচনে অনিয়ম, সহ নানাভাবে দুর্নীতি শুরু করেন।প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম এসি রুমে থাকলেও শিক্ষার্থীরা বিশুদ্ধ পানি পান করার সুযোগ পাননা ।শিক্ষার্থীরা বলেন- প্রধান শিক্ষক কখনো শ্রেণি কক্ষে পাঠদান করাতেন না। এমনকি এসব অনিয়ম নিয়ে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে উল্টো রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে হুমকি-ধামকি ও নানাভাবে হয়রানি করা হতো।সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশে সিরাজগঞ্জ জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মুনতাসির মেহেদী উক্ত বিদ্যালয়ে তাদের দাবি আমলে নিয়ে অবিলম্বে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানউন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। এসব কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা সহ বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে গত ১৮ তারিখ রোজ রবিবার বিকেলে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম পালিয়ে যান।
নাগরিক সমাজের রেজাউল রহমান খান দুদু ও আব্দুল হাই যৌথ বিবৃতিতে বলেন, প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে বিভিন্ন নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্বসাৎ করেছেন।নাগরিক সমাজের শামিম হোসেন মির্জা বলেন, দির্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সাথে একত্ব হয়ে প্রতিষ্ঠানে অর্থ লুটপাটের পাশাপাশি শিক্ষার মান সর্বনিম্ন পর্যায় নিয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। এমতো অবস্থায় প্রধান শিক্ষক কোনদিন কখনও এ বিদ্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটানা ঘটার সম্ভবনা প্রবল।নাগরিক সমাজের অপূর্ব আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি সাধন করে নিজে অর্থের মালিক হলেও অথচ প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও নেই। যুব ও ছাত্র সমাজের কামরুল ইসলাম ও তানভির রানা রাব্বী এবং আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে পুনরায় যদি ফিরে আসে তাহলে সাধারন মানুষের আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে।এদিকে অভিবাক আব্দুল করিম ও রুহুল আমিন মেম্বর জানান, সামনে এসএসসি পরিক্ষা এমতাবস্থায় তাদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে ধাপিত হচ্ছে আমরা এ বিষয় নিয়ে বিচলিত তাই চলমান সমস্যা সমাধানের জন্য উর্ধতন কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জনাব, আফসার আলী মুঠোফোনে জানান, চলমান সমস্যার বিষয়টি আমর শুনেছি ইতিমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এলিজা সুলতানা সরজমিনে গিয়ে বিষয়টি সমধানের চেষ্টা করেও তিনি সমস্যা সমাধান করতে পারেননি।সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব, মনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে জানান, এবিষয়ে এখনও কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি, তবে বিষয়টি শুনেছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আমরা মিলিতভাবে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করছি।এসময় শিক্ষার্থীরা জানান যতক্ষণ পর্যন্ত শহিদুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের পদ
থেকে পদত্যাগ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে।
আরও খবর...