শাহাদাত হোসেন নোবেল :দিঘলিয়া (খুলনা) : খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে আবাদি উঁচু জমিতে, বাড়ির পাশে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় পান চাষে চাষীদের আগ্রহ বাড়ছে । এতে একদিকে চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি, অন্যদিকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এলাকার অনেক দরিদ্র পরিবার। তবে বাজারে পানের দাম বেশি ও ব্যাপক চাহিদা থাকায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষের প্রতি ঝুঁকছে স্থানীয় কৃষকরা।এক সময় দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়ন জুড়ে দেখা যেত ধানখেত, এখন সেখানে চোখে পড়ে পানের বরজ। যাঁরা একসময় শ্রমিকের কাজ করতেন, তাঁরাও বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত জায়গায় পানের চাষ করছেন। পান চাষ করে এলাকার অনেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। পানের বরজে ঘেরা এই ইউনিয়নের নাম বারাকপুর। দিঘলিয়া ও গাজীরহাট ইউনিয়নের কিছু এলাকায়ও পানের চাষ হয়ে থাকে।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর উপজেলায় ১২হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। এর প্রতি একর জমিতে পানের উৎপাদন ব্যয় পাঁচ-ছয় লাখ টাকা, আর তা বিক্রি হয় ১০-১২ লাখ টাকায়। উপজেলায় দিঘলিয়া, লাখোহাটি, নন্দনপ্রতাপ, দেয়াড়া, গাজীরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২ সহস্রাধিক পান চাষি রয়েছে। উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নের নন্দনপ্রতাপ গ্রামের গৌতম রায় জানান,পান লাভজনক ফসল। উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় বরজ পাল্টে দিয়েছে তার অভাবের সংসারের চিরচেনা স্মৃতি। পানের এই আয় থেকেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। কিনেছেন ফসলি জমিও।যাঁদের কৃষি জমি নেই, তাঁরাও বসতবাড়ির পাশে ও আঙিনায় পানের চাষ করছেন। বারাকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী সাহাগীর হোসেন পাভেল বলেন, বহু বছর ধরে এ ইউনিয়নের অনেক কৃষক ধানের আবাদ কমিয়ে দিয়ে পানের চাষ করছেন। এতে লাভ বেশি। ব্যবসায়ীরা গ্রামে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে এসব পান কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে পান ঘিরে। দিন দিন বাড়ছে এলাকায় পানের চাষ। পান বিক্রি করে নগদ অর্থ কৃষকের হাতে আসে। বারাকপুর বাজারে উৎপাদিত পান পাইকারি বিক্রি হয়। এখান থেকে পান দেশ বিদেশে চালান হয়। কিন্তু তাদের সরকারি কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয় না।গত শুক্রবার বারাকপুর ইউনিয়নের নন্দনপ্রতাপ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ পানের বরজ, কেউ খেত থেকে পান তুলছেন, কেউ করছেন খেতের পরিচর্যা। আবার কেউবা খেত থেকে সংগ্রহ করা পান বাড়ি এনে গাছানো হচ্ছে। কথা হয় নন্দনপ্রতাপ গ্রামের পানচাষি উত্তম ও দিপক রায়ের সাথে। তিনি বলেন, ‘পান আমার কষ্ট দূর করছে। এখন ঘরে আছে ধান, আর ক্ষেত ভরা পান আছে। সবমিলে আমার সুখের সংসার।একই গ্রামের দিলীপের বাড়ি। বাড়ির পাশে লাগানো পান ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। তিনি বলেন, এক বছরে দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করেছি। বহু বছর ধরে বংশ পরস্পরায় পানের চাষ করে আসছি। পান বিক্রি করে প্রত্যেক বছরে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা আয় করছি। দিঘলিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে অসংখ্য পানের বরজ রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত পান উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী নড়াইল, যশোর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এরই মধ্যে উপজেলার পানপল্লী খ্যাত দিঘলিয়া, বারাকপুর, নন্দনপ্রতাপ, মাঝিরগাতী, গাজীরহাট, বোয়ালিয়ারচরসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পান চাষ করে বদলে দিয়েছে গোটা উপজেলার পরিবেশ। এ উপজেলার পান চাষি তার শ্রম কাজে লাগিয়ে পান চাষ করে বদলে দিচ্ছে তাদের পরিবারের ভাগ্য।এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কিশোর আহমেদ জানান, পান লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এবার উৎপাদিত পান থেকে প্রচুর আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও পান চাষ করতে গিয়ে কৃষক কোন রকমের সমস্যার সম্মুখীন হলে খুব দ্রুত তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন তিনি। পাশাপাশি রয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি অফিসারবৃন্দ বলেও জানান তিনি। তবে তিনি জানান পান চাষে নিয়োজিত কৃষকদের সরকারিভাবে কোন সার বা নগদ টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয় না।
আরও খবর...