ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ: সংবাদ-পরিবেশক পত্রই সংবাদপত্র। দেশকে জানা এবং নিজেকে জানার জন্য সংবাদপত্র পাঠের প্রয়ােজনীয়তা যথেষ্ট। আধুনিক জীবনযাত্রায় সংবাদপত্র অতিশক্তিশালী গণমাধ্যম।ভাের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবাদপত্র সমস্ত পৃথিবীকে চোখের সামনে এনে দেয়।
আধুনিক মানুষ যত নিজেকে অপরের কাছে মেলে ধরতে চেয়েছে এবং নিজের সঙ্গে অপরের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উপলব্ধি করতে তৎপর হয়েছে ততই সংবাদপত্র সেই প্রকাশের ও উপলব্ধির সহায়ক উপকরণ রূপে উপস্থিত হয়েছে।আর সংকীর্ণ জীবনের গণ্ডি থেকে সংবাদপত্র মানুষকে মুক্তি দিয়ে তাকে বৃহত্তর জগতে নিয়ে যায়।
সুতরাং যে কোন আধুনিক মানুষের কাছে সংবাদপত্র যে তার মনের খােরাক জোগাতে পারে-সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।দৈনিক নাগরিক ভাবনা ৪র্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে কলাম লিখেছেন জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট গবেষক ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন…তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকায়নের এই যুগে সংবাদপত্র পাঠের প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যদিও দেশ ও বিশ্বের সব শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ রয়েছে, ঘরে বসেই পত্রিকা পাঠের সুযোগ রয়েছে, কিন্তু সংবাদপত্রের প্রকৃত পাঠকসংখ্যা পূর্বের তুলনায় কমেছে।সংবাদপত্র কেবল চলতি ঘটনাবলির মিশ্রিত সংকলনই নয়, বরং এটি সমাজের দর্পণ, একটি রাষ্ট্রের কণ্ঠস্বর, জ্ঞান-বিজ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়ার শক্ত হাতিয়ার। তাই সংবাদপত্রের পাঠক যদি কমতে থাকে, শিল্প, শিক্ষা, বিজ্ঞান, গবেষণায় জাতির অগ্রযাত্রাও ব্যাহত হবে। এ থেকে উত্তরণের জন্যই সারাদেশের মানুষকে পত্রিকা পাঠে উৎসাহিত করতে হবে।আর সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। এই স্তম্ভের দায়ভার প্রহণ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ অর্থবল থাকলেও নৈতিক মনোবল অনেকের থাকে না। মার্কিন কথা সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন বলেছিলেন, প্রতিদিন দুটো করে সূর্য ওঠে। একটি প্রভাত সূর্য এবং অপরটি সংবাদপত্র সূর্য। প্রভাত সূর্যের চিরন্তন আলোয় সমগ্র জগত উদ্ভাসিত হয়। তেমনি সংবাদপত্র সূর্য বা সাংবাদিকতার কল্যাণে আমরা সমগ্র পৃথিবীর দৈনন্দিন ঘটনাবলীকে জানতে পারি। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার দায়িত্ব প্রভাত সূর্যের মতোই চির ভাস্বর। সংবাদপত্রই জনতার শক্তি। জাতীয় সংসদ যেমন গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভ সংবাদপত্র ঠিক তেমনি একটি স্তম্ভ। পার্থক্য এই যে, জাতীয় সংসদ সরকার কর্তৃক পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত ও অর্থায়নকৃত আর সংবাদপত্র সম্পূর্ণরূপে বেসরকারি পর্যায়ের একটি উদ্যোগ।সংবাদপত্রের ইতিবাচক ভূমিকা ছাড়া কোনো আন্দোলন বেগবান বা গতিশীল হয় না। সংবাদপত্রের ক্ষুরধার লেখনী, কলাম, প্রবন্ধ, নিবদ্ধ, প্রতিবেদন সংগ্রামী জনতাকে অধিকার সচেতন করে তোলে। তাই বাস্তবিকই সংবাদপত্রই জনতার শক্তি কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা সকালে চা পান না করে থাকতে পারেন না, আবার কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা ধুমপান না করলে তাদের বাথরুম হয়না। একইভাবে কিছু মানুষ চমৎকার এক অভ্যাস গড়ে তুলেছেন। তারা সকাল বেলা পত্রিকার পাতায় চোখ না বুলিয়ে থাকতে পারেন না।কেউ কেউ আছেন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা কোনদিকে মোড় নিচ্ছেন , কোন বিচার কতদূর আগাচ্ছেন , নতুনভাবে আরও কেউ অ্যরেষ্ট হলো কিনা এগুলো পত্রিকার পাতায় দেখেন।আর আধুনিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ বাহন সংবাদপত্র। সংবাদপত্র সমস্ত বিশ্বের নতুন নতুন খবর নিয়ে প্রতিদিন সকালে আমাদের দ্বারাপ্রান্তে এসে হাজির হয় । গণতান্ত্রিক যে কোনো দেশে তা সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজের দর্পণ । সমাজ গঠনের দৈনন্দিন পরিস্থিাতির সঙ্গে সম্পৃক্ততারয় এবং নিরন্তর তার বস্তনিষ্টা উপস্থাপনায় সংবাপত্র শক্তিশালী গণমাধ্যম। জনমতের প্রতিফলনে ও জনমত গঠনে সংবাদপত্র পালন করে শক্তিশালী ভূমিকা, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বহু দল ও মতের ধারক- বাহক হিসেবে সংবাদপত্র সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করে।
> সংবাদপত্র আবির্ভাবের ইতিহাসঃ
সময়ের প্রয়োজনে আর্বিভাব ঘটেছে সংবাদপত্রের । সংবাদপত্রের প্রচলন প্রথম কোন দেশের শুরু হয তার সঠিক প্রমাণ এখণও পাওয়া যায়নি। তবে জানা যায় , কগজ আবিষ্কারের পর একাদশ শতাব্দীতে চীনদেশে সর্বপ্রথম সংবাদপত্রের প্রচলন হয়। ভারতে মুঘল শাসনামলে হাতে লেখা সংবাদপত্রের প্রচলনহয় ভেনিসে। তারপর রানি এলিজাবেথের সময় ইংল্যান্ডে প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ভারত উপমহাদেশে ‘বেঙ্গল গেজেট’ নামে প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় ১৭৪৪ সালে। ১৮১৮ সালে শ্রীরামপুর মিশন থেকে বাংলা ভাষায় প্রথম সংবাদপত্র সাপ্তাহিক সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয়। তারপর ১৮২২ সালে সাপ্তাহিক সমাচার চন্দ্রিকা ’ ১৮২৯ সালে সাপ্তাহিক ‘ বঙ্গদূত এবং ১৮৩৯ সালে সাপ্তাহিক সংবাদ প্রভাকর, ১৯২৩ সালে কল্লোল ১৯৪১ সালে সবুজপত্র প্রকাশের মদ্যে দিয়ে সংবাদপত্রের ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়ে উঠে।
> সাংবাদপত্রের প্রকারভেদঃ
মানুষের ছোট বড় নানা কৌতুহল মেটাতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সংবাদপত্রের নানা রূপান্তর ঘটেছে। সংবাদপত্রের নান প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন দৈনিক, সাপ্তাহিকম পাক্ষিকম মাসিক, ত্রৈমাসিক ইত্যাদি। তবে শেষোক্ত সংবাদপত্রগুলো মধ্যে সংবাদের চেয়ে গল্প , প্রবন্ধ ,স্বাস্থ্য , বৈজ্ঞানিক আলোচনা ইত্যাদি বেশি থাকে।
> সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহঃ
সংবাদপত্রের খবর সংগ্রহ করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়টার উল্লেখযোগ্য । এছাড়া রয়েছে পিটিআই, ইউ.এন.আই ইত্যাদি। সোভিয়েতের সংবাদ সংস্থার নাম তাস’। বাংলাদেশে বাসস’ ও এনা নামে দুটো সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান আছে।
> সংবাদপত্রের আদর্শঃ
সংবাদপত্রকে অবশ্যই একটা আদর্শ মেনে চরা বাঞ্ছনীয়। আর এ আদর্শটা হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠা সংবাদ পরিবেশেন। সংবাদপত্রকে হতে হবে জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী। জনগণের কল্যাণে সংবাদপত্র একদিকে যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, তেমনি ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠার জন্যও সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। সংবাদপত্রকে অবশ্যই ক্ষুদ্র স্বার্থের কথা চিন্তা না করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করতে হবে। আর তবেই সংবাদপত্র জনগণের আস্থ্য অর্জণে সক্ষম ও সার্থক হবে।
> সংবাদপত্রের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভূমিকাঃ
বিশ্বের রাজনীতি , সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, বানিজ্য , সহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলো, আমোদ প্রমোদ সকল ক্ষেত্রেই সংবাদপত্রের অবাধ পদচারণা। দৈনন্দিন জীবনের নানা অপরিহার্য তথ্যও প্রতিদিন আমাদের সামনে তুলে ধরে সংবাদপত্র। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যার, মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নানা রকম ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবরাখবর সংবাদপত্র আমাদের জানিয়ে দেয়। এভাবে দেশ ও বিশ্ব বাসীকে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়াতে সাহায্য করে। সংবাদপত্রে দুর্ঘটনার খবর পড়ে নিহত আহতের সন্ধানে ছুটে যেতে পারে তাদের আত্মীয় পরিজন। সম্রাজ্যবাদী কিংবা আগ্রাসী তৎপরতার যখন সভ্যতাকে গ্রাস করে, তখন সংবাদপত্র তার বিরুদ্ধে মানবতার জাগরত ঘটায় । পামানুবিক যুদ্ধ কিংবা স্নায়ুযুদ্ধের ভয়াবহতায় পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্খা দেখা দিলে সংবাদপত্র শান্তির সপক্ষে নেয় সচেতন দায়বদ্ধ ভুমিকা। দেশে সাময়িকতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র ,জনগনের ত্রুটি চেপে ধরলে সংবাদপত্র তার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের পটভুমি রচনা করে। গণআন্দোলনের পক্ষে নেয় কার্যকর অবস্থার । যেখানেই মানবতার লাঞ্ছনা , মূল্যবোধের অবক্ষয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিবেকের কন্ঠরোধ সেখানেই সংবাদপত্রের কন্ঠস্বর নেয় প্রতিবাদী ভূমিকা।
> সংবাদপত্র ও জনমত গঠনঃ
সংবাদপত্রের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব গণসচেতনতা সৃষ্টি যা অন্য কোনো মাধ্যম এত প্রবলভাবে তৈরি করতে পারে না। গণতান্ত্রিক শাসনব্যব¯থায় প্রকৃত ক্ষমতা থাকে জনগণের হাতে। ফলে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও ভূমিকা জাতীয় অগ্রগতির পক্ষে কতটা সহায়ক এবং কতটা জনস্বার্থের পরিপূরক তা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ক্ষমতাসীনরা সবসময় তাদের পদক্ষেপকে জোর পলায় ইতিবাচক বলে প্রচার করে এবং বিরোধীরা তাকে একেবারেই প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু সংবাদপত্র উভয় পক্ষের মতামত , যুক্তি ও তথ্যনির্ভর আলোচনা প্রকাশ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজেদের অভিমত গঠন করতে পারে। সংবাদপত্রের পাতায় জ্ঞানীগুণী ও বিশেষজ্ঞদের লেখা প্রবন্ধ ও অভিমত ,কলাম লেখকদের তর্কবিতর্ক , যুক্তিপ্রদান ও যুক্তি খন্ডন, পত্রিকার নিজস্ব সম্পদকীয় ও উপসম্পাদকীয়, চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি ইত্যাদি ইস্যুতে জনমত গঠনে সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে।
> আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের প্রভাবঃ
আধুনিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের গভীর ও ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সংবাদপত্র প্রতিদিন আমাদের সামনে কেবল জাতীয় বিষয়বলিই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনকেও উন্মুক্ত করে করে এবং জনগণ তাদের করণীয় স্থির করে নিতে পারে। জনমত সৃষ্টিতেও সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম । জনশিক্ষা প্রচারেও সংবাদপত্র অগ্রগামী । সংবাদপত্রই সেই মাধ্যম, যা সমাজের নানা দুর্নীতি ও কুসংস্কার দূর করে মানুষের নৈতিক মান উন্নত করে তুলতে সহায়তা করে। আলোকিত জীবন গঠনে, জনগণ ও গণশিক্ষা প্রচার ও প্রসারে সংবাদপত্রই অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।
> সংবাদপত্রের ক্ষতিকর প্রভাবঃ-
সংবাদপত্র জনকল্যাণের একটি বস্তুনিষ্ঠ মাধ্যম কিন্তু আজকাল কিছু সংবাদপত্রের পরিচালক ও সংবাদিকগণ জনকল্যাণের মহান উদ্দেশ্যকে ভুলে গিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ কিংবা দলগত স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে সংবাদপত্রকে ব্যবহার করছেন, যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে জাতীয় জীবনে। কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন সংবাদপত্রের উস্কানিমূলক প্রচারণার জন্য দেশের মধ্যের উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, মারামারি হানাহানি , হিংসা, বিদ্বেয় , কুৎসা ও মিথ্যা রটনা ব্যাপক আকার ধারণ করে । নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এসব সংবাদিকগণ জাতির বৃহত্তর কল্যাণের পাথে বিরাট বাধ্য হয়ে দাড়াঁয় যা দেশ ও জাতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়।আর বর্তমানে সমাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মৌলিক অধিকার প্রথিষ্ঠায় জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আমাদের দেশে ব্যাপক নিরক্ষরতা, পশ্চাৎপদতা ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে সমাজজীবনে আধুনিক ধ্যান ও বিজ্ঞামূখী চেতনা বিকাশে সংবাদপত্রের ভূমিকা হতে হবে কল্যানমূখী । সেক্ষেত্রে ,জনস্বার্থ ও মানবতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানই সংবাদপত্রকে সত্যিকার অর্থে জনগণের কন্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।পক্ষান্তরে এ অতি প্রয়োজনীয় সংবাদপত্রও মিথ্যা-ভ্রান্ত সংবাদ পরিবেশনে দেশ ও সমাজের মারাত্মক এবং অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম। অন্যদিকে নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনে দেশের সার্বিক উন্নতি, ভ্রাতৃভাব ও মৈত্রী বন্ধনে সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই সামাজিক জীবনে, সংবাদপএের প্রয়োজনীয়তা তুলনাবিহীন।
> পরিশেষে বলতে চাই, দেশের হাজারো মিডিয়ার ভিড়ে দৈনিক নাগরিক ভাবনা শুধু একটি গণমাধ্যম নয়; আরো অন্যকিছু।নাগরিক ভাবনা হলো একটি চেতনার নাম; যে চেতনা পাঠকদের মানবিক, ধর্মীয় মুল্যবোধ, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঐতিহাসিক শুভক্ষণে দৈনিক নাগরিক ভাবনার সকল পাঠক, গ্রাহক, সমালোচক, কর্মরত সাংবাদিক লেখক- বিজ্ঞাপনদাতা- শুভানুধ্যায়ী সকলকেই অফুরন্ত শুভেচ্ছা। নাগরিক ভাবনা বাঁকে বাঁকে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়েছে। কন্ঠ চেপে ধরার চেষ্টা হয়েছে; তেমনি মত প্রকাশে প্রতিবন্ধকতার চেষ্টাও কম হয়নি।কিন্তু নাগরিক ভাবনা থেমে থাকেনি, সব বাধা অতিক্রম করে আপোষহীন ভাবেই এগিয়ে চলেছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই এখন সাংবাদিকতা ঝুকিপূর্ণ পেশা। বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নয়। নিবন্ধিত পত্রপত্রিকা সম্পর্কিত চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত মোট পত্রিকার সংখ্যা ৩ হাজার ১৫৪টি। যার মধ্যে ১ হাজার ২৬৫টি দৈনিক, ৩টি অর্ধ সাপ্তাহিক, ১ হাজার ১৯৪টি সাপ্তাহিক, ২১২টি পাক্ষিক, ৪৩৫টি মাসিক। এ ছাড়া বাকি পত্রিকাগুলো দ্বিমাসিক, ত্রৈমাসিক, চতুর্মাসিক, ষাণ্মাসিক এবং বার্ষিক পত্রিকা। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, মিডিয়ার বিচ্ছুরণ ঘটেছে বাংলাদেশে। এর বাইরে আছে ৪৫টি টেলিভিশন।আর মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে শাসকদের অস্ত্র হিসেবে বিজ্ঞাপন তো রয়েছেই। এর মধ্যে দেশের কর্পোরেট হাউজগুলো যখন নতুন নতুন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করে সেটাকে ব্যবসার ‘ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছে;নাগরিক ভাবনা ব্যবসা-বানিজ্য রক্ষার ঢাল নয়; দেশের স্বকীয়তা- সার্বভৌমত্ব রক্ষার ঢাল হিসেবে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কাজ করছে। নানান সীমাবদ্ধতা, আর্থসামাজিক টানাপোড়েন, সংবাদপত্র শিল্পে অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দোলাচলে বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে দৈনিক নাগরিক ভাবনা । মুক্তিযুদ্ধের মুল তিন লক্ষ ‘সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার’ প্রতিষ্ঠায় লড়াই অব্যাহত রেখেছে। দেশের সাবভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ আর গণমানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, যা পাঠকদের কাছে নাগরিক ভাবনা তুলেছে আরো আকর্ষণীয়। নাগরিক ভাবনা দলমত নির্বিশেষে সব পাঠকের পত্রিকা। সম্পাদকীয় নীতির প্রশ্নে আপোষহীন থেকেই খবরকে খবর হিসেবে প্রচার করছে। দেশের রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, ভূ-রাজনীতি, সংস্কৃতি, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, মতামত, বিশ্লেষণ, শিক্ষাঙ্গন, সমাজ জীবন, নাটক-সিনেমা, সঙ্গীত, খেলাধুলা, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, ইসলামী দুনিয়া, আর্ন্তজাতিক ঘটনাবলীর খবরাখবর তুলে ধরেছে সব শ্রেণীর পাঠকের জন্য। খবর প্রকাশে এই বৈচিত্র প্রবীণ-নবীন সব শ্রেণীর পাঠকের মধ্যে রচনা করেছে সেতুবন্ধন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে চিন্তা-চেতনায়, কর্মে পরিবর্তিত বিশ্ব ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা কিছু সত্য, সুন্দর, ভালো, মহৎ, জনকল্যাণকর এবং দেশ-জনগনের পক্ষে সেগুলো তুলে ধরছে। ইসলামী মুল্যবোধের ব্যাপারে আপস না করেই খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ধর্মাবলম্বীর অধিকার, মত ও পথকে সমান গুরুত্ব দিয়েছে। রাজনীতির চিন্তা-চেতনা ও মতামত গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশ করছে। দৈনিক নাগরিক ভাবনা ৪ বছর শেষ করে ৫ম বছরে পদাপর্ণ করেছে। পত্রিকাটি দৃঢ়তা সততার সঙ্গে সত্য সংবাদ প্রকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। পাঠকের ভালোবাসায় পত্রিকাটি ৪র্থ পেরিয়ে ৫ম বছরে পদাপর্ণ করল। “ পত্রিকাটি পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছে। পত্রিকাটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। দৈনিক নাগরিক ভাবনা পত্রিকার বর্ষপূর্তি,৫ম বছর পদাপর্ণ উপলক্ষ্যে শুভক্ষণে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, পাঠক-শুভানুধ্যায়ীদের জানাই অকুণ্ঠ শুভেচ্ছা।
লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।