তিমির বনিক, নিজস্ব প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্বামী অন্য মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার অপরাধে প্রথম স্ত্রী’কে শারীরিক নির্যাতন করে বসতঘর থেকে তাড়িয়ে দরজায় তালা দেয় পঞ্চায়েত সভাপতি, সম্পাদক সহ গ্রাম্য মাতব্বররা। অবশেষে সেনাবাহিনী রোববার বিকেলে তালা ভেঙ্গে তাদেরকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার লক্ষীছড়া চা বাগানের নিয়মিত শ্রমিক সাগর ভুমিজ প্রায় ১৮ বছর আগে সারদা ভুমিজকে বিয়ে করে কাটাজঙ্গল এলাকায় নিজেদের বসত বাড়িতে বসবাস করছে। তারা নিঃসন্তান হওয়ায় সাগর ভুমিজ প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে গ্রামের সম্বারি ভুমিজ টুনি (২৫) নামে এক মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। এরপর সাগর ভুমিজের প্রথম স্ত্রী সারদা ভুমিজ একাই নিজ বাড়িতে বসবাস করছিল।এদিকে, সাগর ভুমিজ গ্রামের অন্য একটি মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করার অপরাধে গ্রাম পঞ্চায়েতের সভাপতি রাজেন্দ্র সিং ভুমিজ, সম্পাদক মাখন সিং ভুমিজ, মাতব্বর দীলিপ সিং ভুমিজ, মিলন সিং ভুমিজ, মিনু সিং ভুমিজ প্রমূখ।প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সারদা ভুমিজকে গত ৩০ জুন শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে টেনে হেঁচড়ে বসতঘর থেকে বের করে ঘরে তালা দিয়ে দেয়। তারা হুমকি দেয় এই বাড়িতে থাকতে হলে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। নতুবা গ্রামের আশপাশ এলাকায় দেখা গেলে তিনজনকেই মেরে ফেলবে। তাদের ভয়ে দেড় মাসের অধিক সময় সারদা ভুমিজ, স্বামী সাগর ভুমিজ ও সতিন সম্বারী ভুমিজ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে।অবশেষে ভুক্তভোগি সারদা ভুমিজ, তার স্বামী সাগর ভুমিজ ও সতিন সম্বারী ভুমিজ শনিবার সন্ধ্যায় সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দেন। ওই দিন রাতেই সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আতিক তাদেরকে নিয়ে লক্ষীছড়া বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যান এবং দ্রুত তাদের বসতঘর বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। এসময় খোঁজ করেও অভিযুক্তদের সেনা বাহিনী পায়নি। পরদিন রোববার পর্যন্ত বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিকেলে সেনাবাহিনী সরেজমিনে গিয়ে তালা ভেঙ্গে তাদেরকে ঘরে প্রবেশ করে দিয়েছে।সোমবার বিকেলে সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগি সারদা ভুমিজ জানান, ‘আমার স্বামী একটি মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছে। তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। ওই মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সাথে সংসার করতে আমাদের কারো কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু পঞ্চায়েতের সভাপতি ও সম্পাদক তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে অন্যায়ভাবে আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে ঘরে তালা দিয়ে দেয়। তারা বলেছে এই ঘরে থাকতে হলে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি কোথাও বিচার পাইনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। দেড় মাস পালিয়ে থাকার পর অবশেষে সেনাবাহিনীর কাছে যাওয়ায় তারা আমাদের ঘর ফিরিয়ে দিয়েছে।’
আরও খবর...