নাশকতার অভিযোগ এনে গত ৩০ আগস্ট মুক্তাগাছা থানায় সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদসহ ৯২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৪০০—১৫০০ জনকে আসামী করে মামলা করেন দাওগাঁও ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম। এই মামলায় ২২ নম্বর আসামী বুলবুল (৪৫), ৮৪ নম্বর আসামী লুৎফর রহমান (৪৫) এবং ৯০ নম্বর আসামী মুন্নাফ মিয়া কামাল (৪০) বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা সকলেই উপজেলার ঘোগা ইউনিয়নের বাসিন্দা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তারা মামলা—হামলা জেল খাটাসহ নানা ভাবে হয়রানীর শিকার হয়েছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম—আহবায়ক কামরুজ্জামান লেবু উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ভাবে মামলায় তাদের আসামী করেছেন। এমন বিষয়ে দলের ভিতরে বাহিরে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ায় বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করার কথা জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
ভুক্তভোগি লুৎফর রহমান বলেন, আমি টানা তিনবারের ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার। বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে ২০১০ একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক দুলাল গতিরোধ করে লোকজন নিয়ে মোটরসাইকেলে ওপরে আমার দুটি হাত রেখে একটি কেটে ফেলে অন্যটি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এখনও বাম হাতটি স্বাভাবিক হয়নি। অন্যের সহযোগিতায় চলতে হয়। ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মাহবুবুল আলম মনি বাদি হয়ে আমাকে প্রধান আসামী করে নাশকতার মামলা করে। ছাত্ররা একটি নতুন দেশ উপহার দেওয়ার পর ভেবেছিলাম একটু নিজের দুঃখ ঘুচাব। কিন্তু গত ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম—আহবায়ক কামরুজ্জামান লেবুর পক্ষ না নেওয়ায় আমাকে বিএনপির মামলায় আওয়ামী লীগ বানিয়ে আসামী করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে এখন বাড়ি ছাড়া। আমার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে স্বাধীনতার পর থেকেই জড়িত। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতির শিকার হব কখনও ভাবিনি।
আরেক ভুক্তভোগি মুন্নাফ মিয়া কামাল বলেন, ঘোগা ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কামরুজ্জামান লেবুর পক্ষে অবস্থান না নেওয়ায় আমাদেরকে নাশকতার মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। দলের নীতি নিধার্রকদের কাছে আহবান থাকতে বিষয়টি তদন্ত করে যেনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।
কামরুজ্জামান লেবু চেয়ারম্যান পদে ফেল করার কারণে বিএনপির করা নাশকতার মামলায় আসামী হয়েছেন জানিয়ে ভুক্তভোগি বুলবুল বলেন, আমি ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য। নিবার্চনে আমার ভাই মোশারফ হোসেন মুকুল লেবুর পক্ষে অবস্থান নিলেও সে ফেল করে। তাঁর ধারণা আমার ভাই পক্ষে কাজ করলেও ভোট দেয়নি, তাই মামলায় আসামী করা হয়েছে।
নাশকতা মামলার বাদি দাওগাঁও ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নির্দেশে এই মামলায় প্রত্যেককে আসামী করা হয়েছে। তবে মামলায় বিএনপির তিনজন রয়েছে সে বিষয়ে আমি অবগত নই। কি কারণে এমন হয়েছে সাক্ষাতে সরাসরি বলব।
মামলায় বিএনপির তিনজনকে আসামী করার ঘটনার দুঃখপ্রকাশ করে মুক্তাগাছা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান সদস্য জাকারিয়া হারুন বলেন, লুৎফর, বুলবুল এবং কামাল বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত সকলেই জানে। মামলা হওয়ার পর তারা আমার কাছে আসছিল, বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি তারেক রহমান এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম—আহবায়ক কামরুজ্জামান লেবু বলেন, লুৎফরসহ অন্যরা কখোনই বিএনপি করেনি। তাই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।