জেমস আব্দুর রহিম রানা: বিভিন্ন সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে দীর্ঘ ৩৭ বছর পর যশোরের লেবুতলা এলাকার মানুষ সরকারী রাস্তা আবার ফিরে পেলেন। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় যশোর জেলা প্রশাসক এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর আদেশ মোতাবেক লেবুতলা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে রাস্তার সীমানায় লাল ফ্লাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।
যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের বীরনারায়নপুর গ্রামে ২.২৭ একর জমি কয়েকবার জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা প্রমাণ হয় এবং বিভিন্ন ব্যক্তির নামে তঞ্চকতার মাধ্যমে হাল রেকর্ড হওয়ায় যশোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত (২৬ মে) ৮৪/Xlll/ ২০২২-২৩ নং মামলার আদেশ মোতাবেক রেকর্ড সংশোধিত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে যশোর জেলা প্রশাসকের নামে ১ নং খাস খতিয়ান ভূক্ত করা হয়েছে। আর এ রাস্তা ফিরে পেয়ে এলাকার কৃষকেরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। কারণ এ রাস্তার দুইপাশ দিয়ে সবজি চাষ সহ কয়েক’শ বিঘা ধানের চাষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বীর নারায়নপুর গ্রামের ১৪৩নং মৌজার ২৬নং দাগের সরকারি রাস্তাটি বীর নারায়নপুর বাইপাস সডকের নন্দ ঘোষের জমির পাস দিয়ে মাঠের মধ্য দিয়ে শর্শনাদাহ গ্রামের পাশ দিয়ে ইব্রাহিম বিশ্বাসের সবজি ক্ষেতের পাশ দিয়ে মোল্যাপাড়ার ব্যক্তিগত ইটের রাস্তা হয়ে আবারও ঈদগাহের পাশ দিয়ে বাইপাস সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় কিলোমিটার। এ রাস্তা ভর লাল ফ্লাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকার কৃষকেরা বহুদিন পর হলেও এ রাস্তা ফিরে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছেন।
শর্শনাদাহ গ্রামের জাফর জানান, আমরা আশায় করতে পারি নাই যে রাস্তা ফিরে পাবো। আসলে আমাদের এই দুই গ্রামের সংযোগ পথ বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা দখল হওয়ার কারণে। শত শত বিঘা সবজি এবং ধান উঠানো এ রাস্তা দিয়ে খুবই সহজ হয়ে যাবে। সরকারের নিকট আমার দাবী দ্রুত যেন এ রাস্তাটি মাটি দিয়ে বাধা হয়।
লেবুতলা গ্রামের রাজকুমার জানান, রাস্তা হওয়ায় হাজারো মানুষ প্রাণে বেঁচেছে। কারণ এ রাস্তা বন্ধ হওয়ায় মাঠের চাষাবাদ করার মত কোন উপায় ছিলনা । বীর নারায়নপুর গ্রামের নিমাই ঘোষ জানান, রাস্তা যেহেতু হয়ে গেল খুবই আনন্দের বিষয়। তবে এখন রাস্তায় চলাচল করার উপযোগী হওয়া প্রয়োজন। এবার ধান আর সবজি নিয়ে কষ্ট করতে হবে না। সহজে উঠানো যাবে। শর্শনাদাহ গ্রামের সবুর আলী জানান, মাথায় করে সবজি বহন করে বাজারে নেওয়ার ঝামেলা মুক্ত হলো। এবার সহজেই মাঠে ভ্যান- ইজিবাইক চলে আসবে। এখন সরকার দ্রুত রাস্তায় চলাচলের মত ব্যবস্থা করে দিক।
বীরনারায়নপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন জানান, বেদখল হয়ে যাওয়া সরকারি রাস্তাটি দখলমুক্ত করতে আমি প্রথমে ২০১৯ সালে সাংবাদিকদের এনে মানববন্ধন সহ এলাকার মানুষের গণ স্বাক্ষর নিয়ে যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করি। আজ আমি খুবই আনন্দিত। কারণ আমার প্রচেষ্টায় আল্লাহর রহমতে এলাকার মানুষ রাস্তা ফিরে পেয়েছে। তবে আমাকে এলাকার মানুষের অনেক গালিগালাজ এবং বিভিন্ন হুমকি-ধমকির মধ্যেও পড়তে হয়েছে। এখনো অনেকে বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে। এদিকে রাস্তা যাতে না হয় সে বিষয়ে অনেকে টাকা দেয়ার অফার দিয়েছে। তবে আমি চেস্টার দিকে কোন ত্রুটি করিনি এবং কারোর কথাই শুনিনি। আমার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরতে এবং বহু কাগজপত্র উঠাতে অনেক অর্থ ব্যয় হলেও কোন মানুষের নিকট হতে টাকা পয়সা উঠায়নি। আমি নিজের অর্থ দিয়েই কাজ করছি।
লেবুতলা ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, যে কোন ভাবে সরকারি রাস্তা ব্যাক্তি মালিকানায় রেকর্ড হয়েছিল । সেটা সরকার দেরিতে হলেও জানতে পেরে গত (২৬ মে) যশোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি’র এসিল্যান্ড স্যারের আদেশে ১নং খাস খতিয়ানে আনা হয়েছে। যশোর জেলা প্রশাসক এবং সহকারী কমিশনার ভূমি’র আদেশ মোতাবেক অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সাথে সাথে রাস্তার উপর লাল ফ্লাগ দিয়ে স্থানীয় সার্ভেয়ারের মাধ্যমে পরিমাপ করে চিহ্নিত করা হয়েছে। এলাকার সকল ব্যক্তিদের লাল ফ্লাগ না উঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। রাস্তার উপর দিয়ে যাদের ফসল আছে তাদের ক্রমান্বয়ে ফসল উঠায়ে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ফুলবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের এসআই এবং ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে অবগত করা হয়েছে।
আরও খবর...