শাহীন শহীদঃ তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে কুড়িগ্রামে বেড়েছে লোডশেডিং। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গরমে হাঁসফাঁস করছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রলের সঙ্গে ক্ষোভও ঝাড়ছেন অনেকে। বিদ্যুৎ নিয়ে এমন নাজেহাল অবস্থাকে কুড়িগ্রামের সঙ্গে বৈষম্য বলছেন কেউ কেউ।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকেরও কমে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন। গরম না কমলে সহসাই এই অবস্থার অবসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বকেয়া থাকায় ভারতের আদানি গ্রুপ জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গড়িমসি করছে। ফলে সারা দেশেই বিদ্যুৎসংকট চলছে। আর রংপুরের ‘কনফিডেন্স পা’ নামে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী আইপিপি কোম্পানির প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে বিদ্যুৎসংকটে কুড়িগ্রামের মানুষ বেশি পরিমাণে লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন।।
জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনাবৃষ্টির কারণে আমন খেতে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সেচ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের বেশিরভাগ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হওয়ায় আমন চাষে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ডিজেল চালিত শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন।
এছাড়া, সামর্থবানরা ঝুঁকছেন আইপিএসের দিকে। তবে রুটিন মেনে চলা লোডশেডিংয়ে আইপিএসের ব্যাটারি চার্জ করা নিয়েও সংশয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পৌরসভার গ্রাহক আমিনুল ইসলাম ও কচাকাটা- কেদার এলাকার পল্লীবিদ্যুৎ গ্রাহক হযরত আলী আশরাফ বলেন, ‘বাড়িতে ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধ মানুষ আছে। আমার বাবাও চরম অসুস্থ। গরমে কেউ ঘরে থাকতে পারছি না।
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম , এক ঘণ্টা পরপর কারেন্ট
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম , এক ঘণ্টা পরপর কারেন্ট যায়। মাঝে মধ্যে দেড়- দুই ঘণ্টাও কারন্টে থাকে না। বিদ্যুৎ না থাকায় দোকানে কাজ করা যায় না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করা যাবে না।’
চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন ঘাটতির কথা বলছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা জানায়, সরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ ৫ ধরণের পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। সব প্লান্টের জ্বালানি সরবরাহ করে পিডিবি। বর্তমানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, কুড়িগ্রামের টগরাইহাট গ্রিডে জেলার ৫টি উপজেলার (সদর, উলিপুর,চিলমারী, রাজারহাট ও ভূরুঙ্গামারী) জন্য মোট চাহিদা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট। বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৮ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। কুড়িগ্রাম শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। তাদের আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ১৩ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৭ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এছাড়া, ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে স্ক্যাডা অপারেশনের মাধ্যমে সরবরাহ বন্ধ করলে লোডশেডিংয়ের সময় আরও প্রলম্বিত হবে।
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মহিতুল ইসলাম বলেন, ‘কুড়িগ্রামে আমাদের প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। ফলে আমাদের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনে ৪০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ লোডশেডিং চলছে।