ঢাকা মহানগরীর আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী আইন ও বিধিমালা জরুরী : এডিসি জাহাঙ্গীর
সর্বশেষ পরিমার্জন:
বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪
৪১
বার পঠিত
»»»»» »»»»»
মোঃ মনিরুজ্জামানঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-এ্যাডমিন এন্ড রিসার্চ) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী আইন ও বিধিমালা জরুরী। বুধবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে দৈনিক নাগরিক ভাবনার এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক- এ্যাডমিন এন্ড রিসার্চ) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় মুলত অপারেশনাল ভূমিকা পালন করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ কিন্তু ট্রাফিক অবকাঠামো, ট্রাফিক বিভাগের প্রকৌশলগত বিষয়সমূহ, রাস্তায় চলাচলরত সকল যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন রেজিষ্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, যাত্রী ও পন্য পরিবহন, গণ পরিবহন, ফুটপাত, পার্কিং নীতিমালা, রাস্তায় গাড়ির ধারণ ক্ষমতা ও ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষণ, বায়ুদূষণ, বাস-বে, বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, সরকারি ডাম্পিং স্টেশন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আধুনিক অটোমেটেড ট্রাফিক সিগন্যাল ও নিরাপদ পথচারীদের পারাপার, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করিডোর ব্যবস্থাপনাসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার প্রায় সকল বিষয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, বিআরটিসি, সেতু বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয় ব্যবস্থাপনা করে থাকে। বিগত বহু বছর যাবৎ হাজার হাজার কোটি টাকার নানা প্রকল্প এসব প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা সফল হতে পারেনি। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এখনও হাতের ইশারায় মহানগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ ঢাকা মহানগরীর যানযট নিরসনে সরকারের ১১/১২ টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি ও ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত তবুও সবাই কেন জানি ট্রাফিক বিভাগের উপর দায় চাপিয়ে দেয় সবসময়। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ আরো অনেক দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক পুলিশের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার অত্যন্ত নিবিড় ব্যবস্থাপনা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ট্রাফিক বিভাগের উন্নয়নে ও আধুনিকায়নে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সেই নিবিড় সম্পর্কটি এখনো গড়ে উঠেনি। তাই ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে যুগোপযোগী ডিএমপি ট্রাফিক আইন ও বিধিমালা জরুরি।
তিনি আরও জানান, বৈষম্যহীন উন্নত বাংলাদেশ, শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো ও মহানগরবাসীর সেবা যুগোপযোগী করতে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের জন্য এই মুহূর্তে ডিএমপির ট্রাফিক নিয়ে গবেষণা আরো উন্নত করা ও প্রকৌশলগতভাবে ট্রাফিক অবকাঠামো নির্মাণ খুবই জরুরি। এছাড়াও তিনি আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।
★★ ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের রিসার্চ অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ ট্রাফিক ইন্টারসেকশন রয়েছে মোট ৩৪০টি। এই ট্রাফিক ইন্টারসেকশনসূহের ব্যবস্থাপনা ও গতিশীল ট্রাফিক ধারাবাহিকতার জন্য পুলিশ সদস্যদের রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, তুফান ও বৈরী আবহাওয়া হতে রক্ষায় Reflected Traffic Canopy স্থাপনসহ Adaptive Traffic Control System, ITS, AI ও Cyber Software সংযোজনের মাধ্যমে সমন্বিত ও অটোমেটেড ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা মহানগরবাসীকে উপহার দেওয়া।
★★ ট্রাফিক ইন্টারনেটসেকশন ব্যবস্থাপনা, যানবাহনের আধিক্য ও শ্রেণীকরণ, Safer Pedestrian Crossing এর জন্য এই মুহূর্তে Portable Signal Light, ট্রাফিক সাইন ও Variable Message Board (VMS) বোর্ড স্থাপন, Advanced Driver Assistance System (ADAS) & Driver Monitoring System (DMS) সহ Transport Modelling Software এর ব্যবহার খুবই জরুরি বর্তমান এবং ভবিষ্যত রোড নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণের জন্য যা DMP Traffic Research Unit ইতোমধ্যে সফলভাবে গবেষণা করছে।
★★ এছাড়াও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ পুলিশ সদরদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে বাংলাদেশে প্রথম ঢাকা মহানগরীর সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য আধুনিক DARC Software এর মাধ্যমে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে মহানগর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সফলভাবে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে, এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় নতুন প্রকল্প গ্রহণও জরুরি। এছাড়াও এই মুহূর্তে ঢাকা মহানগরীর রাস্তায় যত U-Turn রয়েছে তা বিবেচনায় নিয়ে নতুনভাবে ডাইভারশন পয়েন্ট ও সময় অনুযায়ী একমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং ট্রাফিক সার্কুলেশন পরিকল্পনা যানযট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যেহেতু সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কোন সমন্বয় ও পরিকল্পনা ছাড়া রোড পার্কিং, রাস্তার মাঝে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের পিলার স্থাপনসহ নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করে থাকে তাই সেটির নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ের সুনির্দিষ্ট জবাবদিহিতামূলক নীতিমালা যানযট নিরসনের জন্য অবশ্যম্ভাবী।
★★ ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের রিসার্চ অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীর জন্য প্রায় ২৫০ টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির ট্রাফিক অফিস, ট্রাফিক বক্স, ট্রাফিক ইনফরমেশন ও সার্ভিস সেন্টার, ট্রাফিক এডুকেশন সেন্টার এবং ট্রাফিক ট্রেনিং পার্ক স্থাপন অতিব জরুরি।
★★ বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত “ডিএমপি ট্রাফিক কারিগরি ইউনিট” এর জন্য মোট ৩৯ টি পদ রয়েছে তা অতিদ্রুত নিয়োগ দেওয়াসহ আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য মোট ৫৫০০/৬০০০ হাজার ট্রাফিক জনবল সংস্থাপন, লজিস্টিক সাপোর্ট, আধুনিক ট্রাফিক কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টার স্থাপন করতে হবে
★★ ঢাকা মহানগরীর টেকসই ও আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ধরে রাখতে অবশ্যই “DMP Traffic Management & Road Safety Research Centre” গড়ে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি অংশীজনদের সাথে নিয়ে ট্রাফিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম, ট্রাফিক মিডিয়া ও তথ্য সরবরাহ সেন্টার, Traffic Live Mobile Appসহ বিভিন্ন দেশের আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে দেশি-বিদেশী সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, বিভিন্ন প্রশিক্ষণসমূহের আয়োজন ও অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।