নইমুল হক নায়ুম, বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে ১৫ বছরের বেশি সময় নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে হারুন অর রশিদ নামের এক গ্রাহক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে হয়রানি বন্ধ ও এতে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নিউ আগমনী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন হারুন। তিনি উপজেলার ফুলতলা গ্রামের বশির উদ্দীনের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হারুন জানান, ২০০২ সালে বালিয়াডাঙ্গী বাজারের হাটসেটে একটি দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ২০০৮ সালে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগটি। কিন্তু ২০১১ সালে হঠাৎ বিদ্যুৎ বিল হাতে পান তিনি। এরপরে ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বিষয়টি অবগত করলে তৎকালীন কর্মরত কনিষ্ঠ প্রকৌশলী কনক সারওয়ার আর এমন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল পাঠাবে না বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেন।
হারুন বলেন, ‘আশ্বস্তের ছয় বছর পর ২০১৭ সালে দিনাজপুর বিদ্যুৎ আদালত থেকে আমার কাছে একটি নোটিশ পাঠানো হয়। তাতে জানানো হয়েছে ২০০৮ সালের তিন মাসের, ২০০৯ সালের ১২ মাসের, ২০১০ সালের ১২ মাসের, ২০১১ সালের ১ মাসের ও সংশোধিত ১ মাসের বিলসহ ভ্যাট ও বিভিন্ন বাবদ ১১ হাজার ৩৮ টাকা পাওনা রয়েছে। এই বিলের সঙ্গে আরও ২০০ টাকা যুক্ত করে পরিশোধের নির্দেশনা দেন আদালত।’
আদালতের নোটিশ পাওয়ার পর হারুন ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি সমাধানের জন্য অনুরোধ করলে মামলা হওয়ার বরাত দিয়ে টাকা পরিশোধ ছাড়া কোনো রাস্তা নেই বলে তাঁকে জানান কর্মকর্তারা। উপায় না পেয়ে হারুন ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন এবং ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকের কাছ থেকে বকেয়া বিল পরিশোধের প্রত্যয়নপত্র নেন। একই প্রত্যয়নপত্র আদালতে পাঠালে দিনাজপুর বিদ্যুৎ আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেন।
হারুন বলেন, ‘২০১৭ সালের সব নিষ্পত্তি হওয়ার পাঁচ বছর পর ২০২২ সালে তাঁকে আবারও বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য একটি নোটিশ পাঠায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। নোটিশটি নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করলে সব কাগজপত্র দেখে ভুল স্বীকার করে পরবর্তীতে এমন আর হবে না মর্মে জানান। এরপরেও গত ৩ এপ্রিল তাঁকে ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বালিয়াডাঙ্গীর আঞ্চলিক অফিস থেকে বিচ্ছিন্ন করা সংশ্লিষ্ট মিটারের বিপরীতে ২০১০ সালের জুন মাসের ৪২০ টাকা বকেয়া বিল চেয়ে একটি চূড়ান্ত নোটিশ পাঠিয়েছে। এটা আমার জন্য চরম হয়রানির।’
হারুন আরও বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে গ্রাহক তিন মাস বিদ্যুৎ বিল না পরিশোধ করলে তাঁর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। অথচ আমার বেলায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরেও ভুতুড়ে বিল পাঠানো হলো। ব্যবসা বন্ধ, দোকান বন্ধ থাকার পরেও ৯ বছর পর আমাকে প্রায় ৪ বছরের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হলো। এটা কেমন নিয়ম?’
জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বালিয়াডাঙ্গী আঞ্চলিক অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক আহসান হাবীব বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সফটওয়্যারের টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে এমনটা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের।’