চাঁদ দেখার জন্য সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু কমিটির মতামত না নিয়েই শুক্রবার (২১ এপ্রিল) শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাবে এবং ২২ এপ্রিল শনিবার ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে– এমন বার্তা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বুধবারের (১৯ এপ্রিল) দেওয়া সেই বার্তা সংশোধন করে এখন ‘চাঁদ দেখার সম্ভাবনা’ আছে– এমন নতুন বার্তা দিয়েছে অধিদপ্তর।
জানা গেছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শনি বা রোববার (২২ বা ২৩ এপ্রিল) দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল, ২৯ রমজান সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যাবে। সে হিসাবে শনিবার বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হবে। একদিনের ব্যবধানে এ বক্তব্যে সংশোধনী এনেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বুধবার রাতেই সেই স্থানাঙ্কের প্রতিবেদনটি ওয়েবসাইট (www.bmd.gov.bd) থেকে সরিয়ে নেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরে রাতেই চাঁদের স্থানাঙ্ক উল্লেখ করে অধিদপ্তরের প্রথম শ্রেণির পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চাঁদ পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দিয়ে ‘প্রশাসনিক মেসেজ’ জারি করা হয়। সেখানে শুক্রবারে চাঁদ দেখার বিষয়ে বলা হয়েছে, অবস্থানগত কারণে আকাশ মেঘমুক্ত থাকা সাপেক্ষে বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর শনিবারের (২২ এপ্রিল) চাঁদ দেখার বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সব স্থানেই বড় চাঁদ দেখা যাবে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, চাঁদ দেখা যেহেতু ধর্মীয় বিষয়, তাই ‘দেখা যাবে’ এর স্থলে ‘সম্ভাবনা আছে’ বলে বুধবারের চাঁদের স্থানাঙ্কের পূর্বাভাসের স্থলে নতুন সংশোধনী আনা হয়েছে।
সরকারের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সংশোধনী আনা হয়েছে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যেহেতু চাঁদ দেখার জন্য সরকারের একটি কমিটি রয়েছে, তাই তারাই চাঁদা দেখার বিষয়টি নির্ধারণ করবেন। আপাতত এই সংশোধনীটুকু প্রচার করেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতি মাসেই চাঁদের স্থানাঙ্ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে অধিদপ্তরের জলবায়ু শাখা। যথারীতি গত ৫ এপ্রিল সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু এবার চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। বিষয়টি না বুঝেই তারা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলে সংশোধন আনা হয়।
বুধবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আগামী শুক্রবার (২১ এপ্রিল) অর্থাৎ ২৯ রমজান সূর্যাস্তের সময় অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬টা ২৫ থেকে ৭টা পর্যন্ত সময়ে আরবি শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাবে।
সংস্থাটির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ওই সময় চাঁদটি চন্দ্রতিথির দ্বিতীয়ায় অবস্থান করবে এবং তখন চাঁদের বয়স থাকবে ১.৩৪০৫ দিন। সেদিন সূর্যাস্তের সময় চাঁদের অলটিটিউড থাকবে ১৬ ডিগ্রিতে। সে হিসাবে ওই দিনই চাঁদ দেখা যাবে।
তার পরদিন অর্থাৎ ২২ এপ্রিল বা ৩০ রমজানের সূর্যাস্তের সময় চন্দ্রতিথির তৃতীয়ায় অবস্থান করবে চাঁদ এবং সেই সময় চাঁদের বয়স থাকবে ২.৩৪০৭ দিন। এসময় চাঁদের অলটিটিউড থাকবে ২৮ ডিগ্রির ওপরে। তাই সেদিন বাংলাদেশের সব স্থানেই চাঁদটিকে বড় দেখা যাবে।
প্রথমে ২০, ২১ ও ২২ এপ্রিল সূর্যাস্তের সময় ঢাকায় চাঁদের স্থানাঙ্কে আবহাওয়া বিভাগ বলেছিল, ২১ এপ্রিল সূর্যাস্তের সময় চন্দ্রতিথির দ্বিতীয়া। সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স হবে ১.৩৪০৫ দিন। শুক্রবার চাঁদ দেখার নির্ধারিত সময় ৬টা ২৫ মিনিট থেকে ৭টা পর্যন্ত। সান্ধ্যকালীর গোধূলির সময় চাঁদের স্থায়িত্ব হবে ৫৩ মিনিট ৮ সেকেন্ড। একইসঙ্গে চাঁদের অ্যাজিমাথ (দিগংশ) ও অলটিটিউড (উচ্চতা) প্রকাশ করে বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যাবে বলে স্থানাঙ্কের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল।
এদিকে ঈদুল ফিতর উদযাপনের তারিখ নির্ধারণে শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সভায় বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, চন্দ্রমাস শুরু হাওয়ার ক্ষেত্রে খালি চোখে চাঁদ দেখার শর্ত রয়েছে।