খুলনাসহ ৪ জেলায় চিংড়ি চাষীদের ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা!
সর্বশেষ পরিমার্জন:
মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
১৭
বার পঠিত
»»»»» »»»»»
বিপ্লব সাহা, খুলনা ব্যুরো : খুলনা বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলীয় চার জেলায় চিংড়ি চাষীদের ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বড় ধরনের খতির আশঙ্কা। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মোংলা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, চুকনগর, রামপাল, রুপসা,তেরোখাদা সহ চার জেলায় প্রায় ৫ হাজারের অধিক মৎস্য চাষিরা ঘের প্রকল্পের মাধ্যমে পানির সোনা চিংড়ি মাছ উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব খাতে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার মুনাফা অর্জন করে দিতে সক্ষম হয়।
আর দক্ষিণ বাংলার উল্লেখযোগ্য চিংড়ি মাছের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চার জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে হাজারের উর্ধ্বে সি ফুড কোম্পানি যেখানে বিভিন্ন এলাকার ঘের থেকে চিংড়ি মাছ এনে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এতে লাভবান হয় স্থানীয় ঘের ব্যবসায়ী সহ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের রাজস্ব খাত। তবে চলতি বছর মুনাফার পরিবর্তে দেশের প্রান্তিক মৎস্য চাষী সহ ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে প্রায় এক ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা বিভাগের মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এ সময় তিনি আরো বলেন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক বেসামাল অবলীলায় ঋতু বৈচিত্র্যের পট পাল্টিয়ে সময় ছেড়ে অসময়ে বিক্ষিপ্ত রূপ ধারণ করে চলতি বছর আবহাওয়ার বৈষম্য নীতিতে প্রথম ধাপে ঘূর্ণিঝড় রেমাল এবং নদীগুলোতে জলোচ্ছ্বাস টানা বর্ষণ সর্বশেষ ভারতের তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো বাধসহ ফারাক্কা ১১৯ টি গেট উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে উজানের পানি ধেয়ে এসে দেশের ১৯ টি জেলা স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধ কোটির বেশি লোকের। মৃত্যু হয়েছে পঞ্চাশের কাছাকাছি। উজানে ধেয়ে আসা পানির স্রোতে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি গবাদি পশু তলিয়ে গেছে রবি শস্য পাশাপাশি তিন ধাপে জলোচ্ছ্বাস ও ভেরিবাঁধ ভেঙে খুলনা সহ আশেপাশে জেলাগুলোর নদীতে বিপদ সীমানার উপর দিয়ে পানি বয়ে যাওয়ার কারণে লোকালয় পানি ঢুকে ঘের প্লাবিত হয়ে মৎস্য চাষীদের স্বপ্ন ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগকৃত পুঁজি হারানোর শঙ্কায় মৎস্য চাষিরা।
খুলনা জেলা ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া এলাকার মৎস্য চাষি মিজানুর রহমান বলেন আমি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে চিংড়ির ঘের করেছিলাম কিন্তু সম্প্রতিক ভারী বৃষ্টিতে বিলের জলবদ্ধতার কারণে ঘেরটি ভেসে গেছে। তিনি আরো বলেন ভারী বৃষ্টিতে প্লাবিত না হয় সেজন্য দেড় লাখ টাকা খরচ করে ঘেরের আইল উঁচু করেছিলাম। তারপরও রেহাই পায়নি আমার সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ওইবিলের আর একঘের মালিক আসলাম শেখ বলেন আমার ৪ বিঘার চিংড়িঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছ ভেসে গেছে যা খরচ হয়েছে তা আর ফিরে পাব না আমার মত আরও অনেকে চিংড়ি সহ অন্যান্য মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে তারা সর্বশ্রান্ত হয়েছে। খাল গুলোর খনন না করায় বিলের পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হতে পারে না। শুধু এই দুই জনই নয় সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি এবং পাইকগাছার ভেড়ি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে প্রায় আড়াই হাজার চিংড়িঘের খামার প্লাবিত হয়েছে ঘের খামার থেকে বেরিয়ে গেছে মাছ। বিপুল অংকের আর্থিক লোকসানের কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষিরা।
চাষিরা জানান প্রায় ১ সপ্তাহের ভারী বৃষ্টিতে ডুমুরিয়া উপজেলার অনেকের ঘের প্লাবিত হয়।
আর পাইকগাছা উপজেলার কালিনগর গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাদ ভেঙ্গে ১৩ টি গ্রামের চিংড়িঘের তলিয়ে যায়। খুলনা জেলার মৎস্যকর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলা ১৩ শত ৪৬ হেক্টর আয়তনের ২০০ টি চিংড়িঘের এবং ৭৫৪ হেক্টর আয়তনের ৪৬৫ টি পুকুরদিঘী ও খামার ভেসে গেছে। ঘের ও খামার থেকে আনুমানিক ৬৭২ মেট্রিক টন চিংড়ি বেরিয়ে গেছে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা জানান বেশ কয়েকটি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় চাষিরা অনেক ঘেরে লবণ পানি তুলতে পারছে না অনেকে স্বেচ্ছায় চিংড়ি চাষ ছেড়ে অন্যান্য ফসল চাষ করছেন। অপরদিকে পুজিসঙ্কটে ভাইরাস ও দাবাডোহে চিংড়ির মড়কের কারণে অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। এছাড়া চিংড়ি ঘেরের বেশ কিছু জমিতে ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে।তার ওপর এবারের বিপর্যয়ের কারণে চলতি অর্থ বছরে চিংড়ির উৎপাদন কমে যাবে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে খুলনায় বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘের কমেছে চার হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমিতে।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা থেকে ২০২২ -২৩ অর্থ বছরে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানি হয় ২৮ হাজার ৩১৬ মেট্রিক টন। যা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় ২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।২০২৩ -২৪ অর্থবছরের রপ্তানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ১৯৬ মেট্রিক টনে। যা থেকে আয় হয় ২ হাজাা ১৯৬ কোটি টাকা । সে লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের রপ্তানির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ১৯৬ মেট্রিক টনে। যা থেকে আয় হয় ২ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে মাছ রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ৩ হাজার ১২০ মেট্রিক টন এবং আয় কমেছে ৬৭৭ কোটি টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ কম হওয়ার আশঙ্কাতো রয়েছেই পাশাপাশি ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে জানিয়েছেন চিংড়ি চাষী ও রপ্তানিকারকরা।