মোঃ রায়হান মাহামুদ: গাজীপুরের কালীগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে দুলাল ভান্ডারী (৫২) নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত দুলাল উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের পাড়ারটেক গ্রামের মৃত বিল্লাল মিয়ার পুত্র। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক ইউপি সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
পারিবারিক, স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুলাল ভান্ডারী তার আত্মীয় বর্তুল গ্রামের সোহেল মাঝির সাথে দেখা করতে যায়। এ সময় সে বর্তুল মোড়ে (সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলনের বাড়ীর নিকট) পৌছলে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে স্থানীয় মাহবুব, হাবিব, রকিব, মাসুদ ও খোরশেদ, দক্ষিণ সোম গ্রামের তারেক হাসান রানা, রায়হান, শাহিন ও রাহাত, উত্তরসোম গ্রামের কাউছার এবং ইছাপুরা গ্রামের ফরহাদসহ অজ্ঞাত ৪/৫জন দুলালের পথরোধ করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। দুলাল এসময় প্রাণ রক্ষার্থে দৌড়ে তার আত্মীয় সোহেলের ঘরে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা ঘরের গেট, দরজা ও জানালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে তাকে পুনরায় অমানষিক শারীরিক নির্যাতন করে মূমূর্ষ অবস্থায় ফেলে রাখে। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান থানার ডিউটি অফিসারকে ফোনে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা নিতে বলেন।
নিহতের স্বজন জুলফিকার আলী বলেন, বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে প্রথমে স্থানীয় ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমান ও পরে থানার এসআই সাইফুল ইসলাম ফোনে জানায় দুলাল অসুস্থ্য অবস্থায় কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দুলালকে গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পাই। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে দ্রæত ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দিলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর, কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ, ওসি তদন্ত ও ওসি অপারেশন ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।
এ ঘটনায় বর্তুল গ্রামের মৃত নুুরুল ইসলামের পুত্র ও তুমলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মাহবুবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কালীগঞ্জ থানায় দায়িত্বরত ডিউটি অফিসার এএসআই আঃ আউয়াল বলেন, মধ্য রাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহবুব ফোনে জানায় এলাকায় একজনকে মারধর করে ফেলে রেখেছে স্থানীয়রা। সে সময় আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে মেম্বারকে পরামর্শ দেয়া হয়।
এ ঘটনায় নিহতের পুত্র আরাফাত বাদী হয়ে শুক্রবার (১২ মে) রাতে ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৪/৫জনকে আসামী করে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছ, যার নং ১১।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফায়েজুর রহমান বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহবুব ডিউটি অফিসারকে জানায় যে, সেখানে দুলাল নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে স্থানীয়রা গণপিটুনি দেয় এবং তার অবস্থা গুরুতর। পরে ডিউটি অফিসার আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে বলেন। মেম্বার তাকে হাসপাতালে প্রেরণ করলে অবস্থা গুরুতর দেখে ডাক্তার দুলালকে ঢাকায় রেফার্ড করেন। সকাল সাড়ে ৫টায় ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে দুলাল মৃত্যুবরণ করেন। তদন্তে বারবার মেম্বার মাহবুবের নাম উঠে এলে তাকে প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। তদন্ত অব্যাহত আছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।