মোহাইমিনুল ইসলাম: আইসক্রিম ছোট বড় সবার কাছে লোভনীয় একটি পন্য। বিশেষ করে প্রচন্ড গরমে রোদের তীব্র খরতাপে শিশু, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী সহ সব মানুষের প্রাণ জুড়ায় অনন্য স্বাদের আইসক্রিম।
তবে কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই কুড়িগ্রামের উলিপুরে গড়ে উঠেছে একাধিক আইসক্রিম তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় নোংরা পরিবেশ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে হরেকরকম ব্র্যান্ডের আইসক্রিম।
উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব আইসক্রিম তৈরির কারখানা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ গড়ে তুলেছেন এসব কারখানা। উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের পুরাতন অনন্তপুর বাজারে ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমানের মালিকানায় নিউ হ্যাপী সুপার আইসক্রিম, আরেক ইউপি সদস্য জয়নাল হোসেন একই এলাকার দাফাদারের মোড়ে গড়ে তুলেছেন বনফুল সুপার আইসক্রিম, তবকপুর ইউনিয়নের রেলগেট বাজারে সাথী সুপার আইসক্রিম সহ নামে বেনামে বেশ কয়েকটি অবৈধ কারখানা গড়ে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নোংরা পানির সঙ্গে ঘনচিনি, আটা, ময়দা, সেকারিন ও বিভিন্ন কালারের রঙ মিশিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে তৈরী হচ্ছে আইসক্রীম।বালাই নেই কোন স্বাস্থ্যবিধির।শ্রমিকরা বাইরে ব্যবহৃত জুতা পায়ে দিয়েই ভিতরে আইসক্রিম তৈরি করছেন।অন্যদিকে আইসক্রিম তৈরি কারখানায় অভিজ্ঞ কেমিস্ট কিংবা দক্ষ টেকনিশিয়ান নেই।পানি শোধনাগার, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরঞ্জাম কিংবা আর্সেনিকমুক্ত কোনো বিজ্ঞানাগার নেই।
এসব কারখানায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি যা শ্রম আইনের পরিপন্থি। তাদের কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা পরীক্ষিত কোনো পোশাক কিংবা সরঞ্জাম দেয় না মালিক পক্ষ।
অবৈধ এই কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরিকৃত আইসক্রিম খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন তরুণ, যুবক, নারী ও শিশুসহ সাধারন মানুষ।
স্থানীয় একাধিক সূত্রগুলো জানায়, উপজেলা ৫টির বিভিন্ন হাট বাজারে স্থাপিত প্রায় শতাধিক আইসক্রিম ও বরফ তৈরির কারখানার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। বিশেষ করে পরিবেশ, বিএসটিআই, যুব মন্ত্রণালয়, ফায়ার ব্রিগেড, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের কোনো প্রত্যয়নপত্র নেই।
এসব নিম্নমানের ও ভেজাল আইসক্রিম খেয়ে উপজেলার হাজার হাজার শিশু-কিশোর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় ও স্থানীয় প্রভাব দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ এই আইসক্রিম কারখানাগুলো।
নিউ হ্যাপী সুপার আইসক্রিম কারখানার মালিক হাফিজুর রহমান দাবি করেন, আইসক্রিম কারখানা দিয়ে এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। কারখানার নোংরা পরিবেশ ও শিশু শ্রমিকের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমি এখানকার মেম্বার সবকিছু সামলে নিবো।
স্পেশাল বন্ধু সুপার আইসক্রিম কারখানার মালিক জয়নাল হোসেন বলেন, লাইনঘাট জেনে তো কারখানা দিছি। কাগজপত্রের জন্য গিয়েছিলাম। সমস্যার কারণে আর এগোতে পারি নাই। তবে একটা কথা স্বীকার করছি আমার এখানে পরিবেশগত সমস্যা আছে। এভাবে সব চলছে আমিও চলছি।
সাথী সুপার আইসক্রিমের মালিক শামছুল হক বলেন, আইসক্রিম নয় মাছের জন্য বরফ তৈরি করি। বাইরে থেকে আইসক্রিম নিয়ে আসি এখানে, এগুলো এখানে তৈরি করি না।
উপজেলা স্যানিটরী ইন্সপেক্টর (স্বাস্থ্য) জয়নুল আবেদীন বলেন, অবৈধ এসব কারখানাকে বারবার নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। অতিশীঘ্রই এসব কারখানার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।