ইরানে হিজাব না পরায় দুই নারীর মাথায় দল ঢেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একটি দোকানে পণ্য কেনার সময় দই হামলার শিকার হন ওই দুই নারী। পরে অবশ্য ভুক্তভোগী ওই দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার (২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে জনসমক্ষে চুল না ঢেকে রাখায় দই হামলার শিকার হয়েছেন দুই নারী। পরে ওই দুই নারীকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
এদিকে ওই দুই ইরানি নারীর মাথায় দই ঢেলে দেওয়ার ঘটনার একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে এবং পরে সেটি ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দোকানে দুই নারী দাঁড়িয়ে থাকার সময় তাদের কাছে একজন লোক এগিয়ে আসেন। পরে ওই দুই নারীর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে তিনি।
এরপর তিনি দোকানের একটি শেলফ থেকে দইয়ের পাত্র নেন এবং একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ অবস্থায় সেটি তিনি তাদের মাথায় ছুঁড়ে মারেন।
ইরানের বিচার বিভাগ বলেছে, দুই নারীকে তাদের চুল দেখানোর জন্য আটক করা হয়েছে। এছাড়া জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার জন্য ওই ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিচার বিভাগ জানিয়েছে। মূলত ইরানে জনসমক্ষে চুল উন্মুক্ত রাখা অবৈধ।
বিবিসি বলছে, বাধ্যতামূলক হিজাব (মাথার স্কার্ফ) পরিধান বন্ধের দাবিতে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভের পর এই দই হামলা এবং সেই ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারীদের গ্রেপ্তার করার ঘটনা ঘটল।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দোকানে ওই নারীরা পণ্য কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন। একপর্যায়ে একজন লোককে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মুখোমুখি হতে দেখা যায়। পরে তিনি কথা বলার জন্য এগিয়ে আসেন এবং দই দিয়ে আক্রমণ করে। এরপর হামলাকারীকে দোকান থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় দোকানদার।
ইরানের বিচার বিভাগের বার্তাসংস্থা মিজান জানিয়েছে, এই ঘটনায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এতে আরও বলা হয়েছে, আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে দোকানের মালিককে ‘প্রয়োজনীয় নোটিশ’ দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি বলছে, জনসমক্ষে হিজাব না পরা ইরানে নারীদের জন্য অবৈধ। তবে এরপরও বড় শহরগুলোতে অনেক নারী নিয়ম থাকা সত্ত্বেও হিজাব ছাড়াই ঘুরে বেড়ান। এছাড়া আইনের প্রতি ক্ষোভ ও হতাশা ইরানের সমাজে ভিন্নমতের জন্ম দিয়েছে।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর নির্যাতনে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি নামের এক তরুণীর প্রাণহানি ঘটে। মাথার চুল ঠিকভাবে ঢেকে না রাখার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং নিরাপত্তা হেফাজতে ওই তরুণীর মৃত্যুর পর থেকে দেশটিতে টানা বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
তেহরান বলেছে, বিক্ষোভে শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিক্ষোভ চলাকালীন সহিংসতা সৃষ্টির দায়ে আরও হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া চারজন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে দেশটিতে।