আল আমিন, শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ মা ক্যান্সারের রোগী, কোন ভাই নাই। আমরা ছয় বোন, বাবা অচল। বাবার জমি জায়গা নেই। খেয়ে না খেয়ে লেখাপড়া করছিলাম। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মাত্র ১৩ বছর বয়সে মাত্র ৪ মাস আগে বালিয়াদির্ঘী ধনী পাড়া গ্রামে আহদের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে বাবা মা হয়তো আমার জন্য একটু আশ্রয়ের ব্যবস্থাা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিধাতা সে সুয়োগ দেয়নি। গত ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৪টার দিকে ধান কেটে বাড়ি ফিরার পথে ট্রলি উল্টে যায় । সে সময় বিধাতা আমার স্বামীর প্রাণ কেড়ে নিল। করুন আর্তনাদের সাথে কথাগুলো বললো আসমা বেগম(১৩)। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার চাওয়া পাওয়া আমাকে পুনুরায় শিক্ষা লাভের সুযোগ করে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে। গত শনিবার সরজমিনে গিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ১৯ নভেম্বর বারিক বাজার এলাকায় গাজীপুরে ধান বোঝাই ট্রলি উল্টে বালিয়াদির্ঘী গ্রামের নিহত ৮ শ্রমিকের বিধাবা স্ত্রীদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তাদের আর্তনাদে যে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। তাদের সবার একই কথা কি হবে? কে দেখেেব আমাদের সন্তানের। তাদের সাথে কথা বলার সময় জরিপে দেখা গেলো যে ৮জন বিধবার মধ্যে ৭জনেরই বয়স ১৩ বছর হতে ২৫বছেের মধ্যে। কেউ সদ্য বিবাহিতা, কেউ এক নস্তানের জননী, কেউ আবার অন্ত:স্বত্তা। কেউ আবার বীরশেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী ও একই দিনের দূর্ঘটনায় নিহত মিজানের স্ত্রী ও একই কলেজের আই এ দ্বিতীয় বর্ষেও শিক্ষার্থী আমেনা বেগম(১৮) কান্নায় ভেঙ্গে গিয়ে বলেন মাত্র ৭ মাস আগে বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে ৬ মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা । চর্তুদিকে অন্ধকার দেখছি। আমার স্বামী মজুরী খেটে যে আয় করতো তা দিয়ে সংসার চালাতো ও লেখাপড়ার খরচ বহন করতো। আমর কপালে সেটিও সইল না। আমার গর্ভেও সন্তানটি মানুষ করা ছাড়া আর কোন স্বপ্ন নেই। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে প্রধান মন্তীর কাছে আমার আকুতি আমাকে এলাকার যে কোন প্রতিষ্ঠানে ছোট একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিন।শারমিন বেগম(২২) বুকে পাথব বেঁধে বলেন সোনামসজিদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ডিগ্রী কলেজ থেকে বিয়ের পরে আইএ উঠি কিন্তু অভাবের সংসার হাওয়া লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় তাই স্থানীয় একটি এনজিওতে কে কাজ করছি। জমি নেই। কোন রকমে চাকুরী ও কিস্তির টাকা দিয়ে একটি ঘর করে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছি। দিনমজুর স্বামী কারিম ধান কাটতে যাবার আগের দিন বলল ধান কেটে আনাবো। তা দিয়ে সংসার চলবে,আর আমি মজুরী খাটবো ও তুমি চাকুরী করবে। তা দিয়ে কিস্তির টাকা শোধ করে দিবো। কোন চিন্তা করিও না। বিধাতার লিখন মানতেই হবে। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে প্রধান মন্তীর কাছে আমার আকুতি আমাকে এলাকার যে কোন প্রতিষ্ঠানে ছোট একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিন। কাসেদের স্ত্রী এ্যামেলী বেগম(৩০) বলেন, স্বামী কাসেদ আলি দিনমজুর ছিল। কিস্তির টাকা তুলে ছোট একাট ঘর তুলে ৫সদস্যের পরিবার নিয়ে বাস করছিলাম। কোন সঞ্চয় নেই। তিন সন্তাান। বড় ছেলে হাফিজিয়া মাদ্রাসায়, মেজো মেয়ে চর্তৃর্থ শ্রেণীতে ও ছোট এখন স্কুলে যায়নি। আমার আশা যদি কোন অসীলায় সন্তান তিনটিকে লেখাপড়া করাবার সুযোগ পেতাম। তাহলেই ভাল হতো। একই পরিবারের পিতা তাজামুল ও ছেলে মিঠুন নিহত হয়। নিহত মিঠুনের স্ত্রী তাজরিন(২০) বলেন মাত্র ৪মাস আগে বিয়ে হয়েছে। চারিদকি অন্ধকার। আমি মেয়ের মত আমার শাশুড়ীর কাছে আজীবন থাকতে চাই বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ও সংগে সংগে অজ্ঞান হয়ে যায়। তার শাশুড়ী একই ঘটনায় নিহত তাজামুলের স্ত্রী শুধু বলেন আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। নিহতদের পরিবারের জন্য পুর্ণবাসনের কোন ব্যবস্থা হবে না কিনা?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান , কাটাগরিতে পড়লে তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বী নিহতদের সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন ও তাদের পরিবারের প্রতি সহানুভুতি জানিয়ে বলেন, ইতিমধ্যে নিহতদেও পরিবারগুলোকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ও মাননীয় সংসদ সদসস্যেও পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ও খাবার দেয়া হয়েছে। আমারা ইতিমধ্যে পরিবারগুলো অবস্থা জানিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃ পক্ষকে জানিয়েছি। তাদের মধ্যে যারা শিক্ষিত রয়েছে তাদের চাকুরীর ব্যবস্থা, যারা শির্ক্ষার্থী রয়েছে তাদের শিক্ষা অর্জনের ব্যবস্থা ও বাকীগুলোগর ছাগল, ভেড়া, গরু পালন, দোকান দেয়া সহ বিভিন্নভাবে পুর্ণবাসনের বাবষÍা গ্রহন করবো ইনশাল্লাহ।
Leave a Reply